• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বলিউড তারকা কারিনাকে ‘বয়স্ক’ বলে বিপাকে পাকিস্তানি অভিনেতা ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে: মির্জা ফখরুল শিক্ষার্থীদের পিকনিক বাসের ধাক্কায় মিনিবাসের দুই যাত্রী নিহত কীভাবে ঢুকল আরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গা যে ব্যাখ্যা দিলো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সহ-সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী দুই দিন ধরে নিখোঁজ হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারে দুদকের অনুসন্ধান শুরু মালাক্কায় আন্তর্জাতিক হালাল ফেস্টিভাল’এ বাংলাদেশ হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন এবার যা যা নিয়ে এলো পাকিস্তানি সেই জাহাজে দিল্লির সব স্কুলে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ

হৃদরোগীরা রোজা রাখতে চাইলে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

রমজান বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য পবিত্র রোজার মাস। এটি এমন একটি নিয়ম, যখন রোজাদার মুসলমানরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রমজানে রোজা রাখা কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।

হৃদরোগ বলতে হৃৎপিণ্ড, বিশেষ করে এর রক্তনালির মধ্যে চর্বির স্তর জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং তা থেকে উদ্ভূত কয়েকটি রোগকে বোঝায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট ফেইলিওরের মতো রোগগুলো এটির অন্তর্ভুক্ত। রোজা থাকাকালে সারা দিন উপবাসের ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যা হৃদরোগীর রোগের লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রমজানে রোজা রাখার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করু:

হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রোজা রাখতে চাইলে তাঁর জন্য প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো নিজের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা। ডাক্তার রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন করবেন এবং রোজা রাখা নিরাপদ কি না সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। যদি ডাক্তার রোজা রাখার পরামর্শ দেন, তবে সতর্কতার সঙ্গে রোজা রাখা উচিত। নিয়মিত নিজের রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ এবং একটি ডায়েরিতে লিখে রাখা উচিত। যদি রোগীর অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত হৃত্স্পন্দন থেকে থাকে, তবে তাতে কোনো পরিবর্তন হলে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং প্রয়োজনে ডাক্তারকে জানানো উচিত।

নির্দেশিত ওষুধ সেবন করুন:

হৃদরোগীরা সাধারণত তাঁদের শরীর ও হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকেন। রমজান মাসে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া অপরিহার্য। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা বা ডোজ পরিবর্তন করা একেবারেই উচিত নয়। ডায়াবেটিসের রোগী তাঁর ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা এবং এর ব্যবহারের সময় পরিবর্তন করে নিতে হতে পারে।

সাবধানে খাবারের পরিকল্পনা করুন:

রোজাদাররা সাধারণত রমজানে দুটি খাবার খান, সাহরি ও ইফতার। এই খাবারগুলো যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণ করে তা নিশ্চিত করার জন্য সাবধানতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন ও চর্বিসহ খাবারগুলো সুষম হওয়া উচিত। ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা রোধ করতে ইফতারের সময় ও পরে প্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল পান করাও গুরুত্বপূর্ণ।

উচ্চ চর্বিযুক্ত ও উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:

রমজান মাসে বেশির ভাগ লোক ইফতার ও সাহরির সময় উচ্চ চর্বিযুক্ত ও উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে। এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে এবং ওজন বাড়াতে পারে, যা হৃদরোগকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। অতএব এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলোর পরিবর্তে ফল, শাক-সবজি এবং সেঁকা রুটি, অল্প ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, ডিম ও ক্রিম ছাড়া দুধের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য।

ব্যায়াম:

রমজানে রোজাদার হৃদরোগী ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। তবে এ সময়ে কঠোর ব্যায়াম করা উচিত নয়, বরং বিকেলে হালকা ব্যায়াম করে ইফতারের পরে বা তারাবি নামাজের পরে রোগীর অভ্যাস অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিত। তা ছাড়া তারাবি নামাজ পড়লে এটি থেকেও একটি ব্যায়ামের উপকার পাওয়া যায়।

বিশ্রাম:

রমজান মাসে বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে হৃদরোগীদের জন্য। কর্মরত অবস্থায় বা গরমে অস্বাভাবিক ক্লান্তি বোধ হলে সাময়িক বিরতি এবং বিশ্রাম নেওয়া উচিত। তাঁদের কমপক্ষে সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন এবং সকালে হঠাৎ তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে ওঠা উচিত না। কারণ এটি তাঁর সারা দিন ক্লান্তির কারণ হতে পারে। তা ছাড়া এ থেকে প্রেসার ও হার্টের অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যেতে পারে।

বিশেষ সাবধানতা:

রমজানে রোজা থাকা অবস্থায় যদি রোগীর বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরার মতো কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাঁর অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো অবজ্ঞা করা উচিত না। কারণ এগুলো গুরুতর কোনো সমস্যার শুরু হতে পারে, যার জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।

শেষ কথা:

রমজানে রোজা রাখা হৃদরোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে সাবধানে পরিকল্পনা করে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিরাপদে রোজা রাখা সম্ভব।

রোগীর রোজা রাখার আগে তাঁদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত, তাঁদের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত, নির্ধারিত ওষুধ সেবন করা উচিত, তাঁদের ইফতার ও সাহরি খাবারের পরিকল্পনা করা, ব্যায়াম করা, বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই পরামর্শগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করে হৃদরোগে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি তাঁর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রেখে নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন।

লেখক
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ