পটুয়াখালী জেলার বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা ও দুমকি রুটে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রুট পার্মিট না থাকায় জেলা বাস মালিক সমিতি এ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে পারছেন না ৪ উপজেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষ। অথচ বিগত ২২ বছর ধরে এ রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ২০০০ সালের শুরুর দিকে বাউফল, গলাচিপা, দশিমনা ও দুমকি সড়কে ঢাকাগামী বাস সার্ভিস চালু হয়। এ রুটে সাধারণ যাত্রীসহ মালামালও পরিবহন করত বাসগুলো। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পটুয়াখালীর লেবুখালী পায়রা সেতু ও গত বছরের জুন মাসে পদ্মাসেতু চালুর পরে এ রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে আসে নতুন দিগন্ত।
দিবা ও নৈশ কোচে সুগন্ধা, মুন, অন্তরা, মেঘনা, হানিফ, বেপারী, খান জাহান পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ২৫টি বাস চলাচল করতো এই রুটে। তখন পায়রা ও পদ্মা সেতু হয়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যেত যাত্রীরা।
শুধু যাত্রী নয়, উপকূলীয় জেলার চার উপজেলা থেকে মাছসহ বিভিন্ন পণ্য পৌঁছে যেত ঢাকার মোকামে। ৭ মাস আগে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে রুট পারমিটের নামে বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা ও দুমকি উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতি। এতে বিপাকে পড়ে যায় সাধারণ যাত্রী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও এ রুটের বাসে ঢাকার মোকামে কাঁচামাল ও মাছ পরিবহন করতেন ব্যবসায়ীরা। এতে খরচও কম হতো। বর্তমানে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মালামাল পাঠাতে হচ্ছে লঞ্চে। এর ফলে সময় এবং খরচ দুটোই বেশি লাগছে। ক্ষতি হচ্ছে পচনশীল মালামাল ও লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ রয়েছে, পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের জিম্মি করে রেখেছেন। তারা সাধারণ বাস মালিকদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মূলত এ রুটে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাস মালিক সমিতির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের খামখেয়ালির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতেও সাহস পান না।
এদিকে মালিক সমিতির চাঁদাবাজির প্রতিবাদ ও পুনরায় বাস চালুর দাবিতে বাউফল ও দশমিনা উপজেলার সাধারণ যাত্রীরা কয়েক দফায় মানববন্ধন করলেও বাস চালুতে উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাউফলের বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু তার সুফল ভোগ করতে পারছি না। জেলা বাস মালিক সমিতির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে বাউফল থেকে বাস সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করতে পারছে না।
দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলেও দশমিনা-গলাচিপা-বাউফল ও দুমকি এলাকার মানুষ সুফলভোগ করতে পারছে না। রুট পারমিট না থাকায় এসব উপজেলার মানুষ বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারছেন না। আমি রুট পারমিট প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
চেয়ারম্যান পরিবহনের দশমিনা কাউন্টার ইনচার্জ রিপন চৌকিদার বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলেও তার সুফলভোগ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ বরং তারা এখন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এখন বিকল্প উপায়ে ভেঙে তারা ঢাকায় যাতায়াত করছেন।
চেয়ারম্যান পরিবহনের মালিক ইকবাল হোসাইন লিটন বলেন, আপনারা জানেন ২০ বছর আগ থেকে পরিবহনগুলো চলাচল করছে। আগের চেয়ে এখানকার রাস্তা ঘাট সুগাম হয়েছে, প্রস্থ হয়েছে এবং সড়ক পরিবহনের রাস্তা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আমাদের ৪ উপজেলায় বাস চলাচলের জন্য রুট পারমিট নেই। সংশিষ্ট কৃর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব যাতে তাড়াতাড়ি উপজেলাগুলোতে রুট পারমিট দেওয়া হয়।
চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, দূরপাল্লার গাড়ির রুট পারমিট জেলা শহর পর্যন্ত। এর বাইরে উপজেলা বা ইউনিয়নে পারমিট নেই। যার কারণে ওই সব রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।