• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন

সিজারের পর টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাই, রক্ত জমাট বেঁধে রোগীর মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

সিজারের পর প্রসূতির পেটে গজ কাপড়, টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাই, সেই সেলাইটাও ঢিলেঢালা। যেন সবকিছুই দায়সাড়া। এমন ঘটনায় পেটে রক্ত জমাট বেধে পঁচে দুর্গন্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনার ১১দিন পরে ওই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা সদরের সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি আড়াল করার জন্য মৃত প্রসূতির স্বজনদের মিমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

 

জানা যায়, গত ১৩ই এপ্রিল পেটে ব্যাথা নিয়ে সুমি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে যান উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রত্না বেগম। এক পর্যায়ে তাকে সিজার করার পরামর্শ দেন ওই ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী সুমি আক্তার। পরে ওইদিন রাতেই তার অপারেশন করেন মাগুরা থেকে আসা ডাক্তার মাসুদুল হক। ঘটনার ১০দিন পরে গত ২৩ এপ্রিল প্রসূতি মায়ের ব্লাডিং শুরু হলে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। ওইদিনই প্রসূতিকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ২৪শে এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

 

মৃত রত্না বেগমের স্বামী মোঃ মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ১৩ ই এপ্রিল সুমি ক্লিনিকে আমার স্ত্রীর সিজার করানো হয়। তখন আমার পুত্র সন্তান হয়। এরপরই বাচ্চা অসুস্থ হওয়ায় ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তারা সেলাই করে বেডে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে কয়েকদিন পরে আমার স্ত্রীর প্রচুর ব্লাডিং শুরু হয়। তখন ফরিদপুর মেডিকেলে নিলে ডাক্তার দেখে বলে, সিজারের পরে যে সেলাই করা হয়েছে তার মাঝে ফাঁকা রয়েছে, সুতো মিলে নাই, ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে পচে গেছে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তার জানায়, যতক্ষণ ব্লাড দেয়া হবে, ততক্ষণই রোগী বাঁচবে। আমি তখন ডাক্তারের কাছে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, এই রোগীর যে সিজার করেছে সে ডাক্তার নাকি কশাই? সেলাই ভালো হয়নি, ফুটো রয়েছে। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অপারেশন করা হলে দেখা যায়, ভেতরে তুলো, গজ কাপড় ও একটা ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া বাচ্চার নাড়িও সঠিকভাবে কাটা হয়নি, ভেতরে রয়ে গেছে। যেকারণে, পেটের ভেতর পচে দুর্গন্ধ হয়ে ইনফেকশন হয়ে মারা গেছে।

 

এ সময় প্রসূতি রত্নার মা বলেন, আমার মেয়ের পেটে ব্যাথা উঠলে ডাক্তার দেখাতে যাই। তখন সুমি ক্লিনিকের সুমি আক্তার সিজার করাতে বলে। আমরা চলে আসতে গেলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাদের এখানে ভালো ডাক্তার রয়েছে, আপনার মেয়ের সমস্যা হবে না। এখন কি করলো ওরা, আমি ওদের বিচার চাই।

 

এ সময় স্থানীয়রা সুমি ক্লিনিক বন্ধ ও জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, এটা হত্যাকান্ড। আমরা সুমি ক্লিনিকের সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানাই।

 

তারা আরো বলেন, সুমি ক্লিনিক নয়, এটা কসাইখানা। রোগী গেলে তারা ছাড়ে না। জোড় করে রেখে দেয়। এর আগেও এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে।

 

তারা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী সুমি নামের মেয়েটি উন্নত চিকিৎসার জন্য বাঁধা দিয়েছে। সিজারের আগে জানানো হয়েছিলো, এখানে সিজার করবো না কিন্তু গ্রামের মানুষ পেয়ে ভুল বুঝিয়ে সিজার করে।

 

এদিকে রত্না বেগমের সিজারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডাঃ মাসুদুল হক। তিনি জানিয়েছেন, গত দেড় বছর যাবৎ মধুখালীতে যাওয়া হয়না, আমি কিভাবে সিজার করবো। তবে, ওই ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী সুমি আক্তারের দাবি ডাঃ মাসুদুল হক সিজার করেছেন কিন্তু তার কোনো স্বাক্ষর রাখা হয়নি।

 

সরেজমিনে গেলে ডাঃ মাসুদকে না পাওয়া গেলে মুঠোফোনে কথা হলে বিষয়টি উঠে আসে।

 

এ সময় এ প্রতিবেকদের সাথে সংবাদ সংক্রান্ত বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন স্বত্ত্বাধিকারী সুমি আক্তার। তিনি অপর স্বত্ত্বাধিকারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মুরাদুজ্জামান (মুরাদ) এর সাথে কথা বলতে বলেন এবং তাৎক্ষণিক ডেকে আনেন। এ সময় মুরাদুজ্জামান বলেন, আপাতত বক্তব্যর প্রয়োজন নেই। আমরা রোগীর স্বজনদের মিমাংসার কথা বলেছি।

 

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আঃ সালাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ