হাসপাতালে নতুন এক্সরে মেশিন এসেছে প্রায় ২ বছর। এক্সরে করার কক্ষে স্থাপন করা হলেও চালু হয়নি। এক যুগেরও বেশি সময় বছর ধরে বন্ধ এক্সরে। জনবল সংকটে দীর্ঘদিন আল্ট্রাসনোগ্রাম না হওয়ায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে মেশিনটি। এদিকে পুরাতন ভবন নিয়ে চিন্তিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা। ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হচ্ছেন রোগীরা। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের জেনারেটরটি। লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীরা অন্ধকারে বা নিজেরা মোমবাতি কিনে আলোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও নানা সমস্যায় জর্জরিত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
স্থানীয় ও রোগীর স্বজনরা জানায়, দ্রুত এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করলে এ অঞ্চলের অসহায় মানুষ বেশ উপকৃত হবে।
হাসপাতাল অন্ধকারে থাকার বিষয়টিও দুঃখজনক বলে জানান তারা। জানা গেছে, হাসপাতালটিতে এর আগের এক্সরে মেশিনটি নষ্ট থাকায় এই সেবাটি বন্ধ ছিল। গত দুই বছর আগে নতুন এক্সরে মেশিন আসে হাসপাতালটিতে। কিন্তু সেটি দীর্ঘদিন বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকার পর কক্ষে স্থাপন করা হলেও কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত বা পা ভাঙা রোগীকে পাশর্^বর্তী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বা অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। জনবল সংকটে নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। জেনারেটর মেশিনটিও নষ্ট।
এদিকে, লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের। অন্ধকার ঘোচাতে নিজেরা মোমবাতি কিনে আলোর ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে জেনারেটরটি। হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেওয়া হয় পুরাতন ভবনে। ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মহিলা ওয়াডের ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হন রোগীর স্বজনসহ তিনজন। এরমধ্যে গুরুত্বর আহত হন সুমি খাতুন ও ফুলজান বেগম। ফুলজান বেগমের ডান পায়ে ২০টি সেলাই দেওয়া হয়। আর সুমি খাতুনকে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি এখন আর জেলার বাইরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও হাসপাতালটির চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান। গাইনি, শিশু, মেডিসিন ও সার্জারী কনসালটেন্ট পদ একদমই খালি।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক্সরে কক্ষে নতুন মেশিন স্থাপন করা হলেও তালা দেওয়া কক্ষটি। একইভাবে জনবল সংকটে পড়ে থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও। দুর্ঘটনায় উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার ফয়সালের পা ভেঙে যায় সম্প্রতি। তিনি বুধবার দুপুরে এসেছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এক্সরে মেশিন নষ্ট হওয়ায় অন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে রিপোর্ট করে হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তিনি। কোহিনুর বেগম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি গতকাল হাসপাতালে তার স্বজনকে ভর্তি করেছিলেন। রাতে ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল। এ সময় অন্ধকারেই থাকতে হয়েছে। রোগীকে রেখে মোমবাতি কিনতে যেতে পারেননি তিনি।
সম্প্রতি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার ফয়সাল হোসেনের। তিনি পায়ের অবস্থা দেখাতে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন। হাসপাতালের এক্সরে মেশিন চালু না থাকায় চিকিৎসক অন্য স্থান কে এক্সরে করতে বলেন। পাশর্^বর্তী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্সরে করে নিয়ে যান হাসপাতালে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানান, নতুন এক্সরে মেশিন স্থাপন করা হলেও চালু করা সম্ভব হয়নি। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও জনবল সংকটে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। জেনারেটরটির একই অবস্থা। এছাড়াও নতুন ভবন নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন তিনি।