• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান ও এমডির দ্বন্দ্ব

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩

ঢাকা ওয়াসায় বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে এমডির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সমালোচনা করেন। অন্যদিকে এমডির পক্ষ নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি ইউনিয়ন।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নেন। সেখানে তিনি সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলেন। বোর্ডের চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গত ১১ মে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি সংগঠনের নামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। যে তিনটি সংগঠনের নামে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ), ঢাকা ওয়াসা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ওয়াসা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।

মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেছেন, ওয়াসা আইনে প্রবিধান তৈরির বিষয়ে বলা হলেও তা তৈরি করা হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় না, যাতে নিজ ইচ্ছামতো কাজ করা যায়। যেহেতু এটা দেখার কেউ নেই। কাজেই যা খুশি তাই করবে।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, বোর্ড চেয়ারম্যান টক শোতে বলেছেন, ‘ওয়াসা বোর্ডকে বাইপাস করে সব কিছু করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ওয়াসা আইন অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা চলছে না।’
মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান টক শোতে বলেছেন, ‘ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ১৩ জন সদস্য, ইনক্লুডিং তাকসিম খান। উনার ভোটাধিকার নেই, উনি উপস্থিত থাকতে পারবেন। উনি উপস্থিত না থাকলেও সভা হতে পারে, কিন্তু উনি উপস্থিত না থাকলে বা ছুটিতে থাকলে কখনোই বোর্ড সভা হতে দেন না এবং আমরা চেষ্টাও করে দেখেছি, উনি হতে দেন না। ঢাকা ওয়াসা বোর্ড কার্যত অকার্যকর।’

চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্য বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে দাবি করা হয়, ঢাকা ওয়াসার যাবতীয় কার্যক্রম বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। টেলিভিশন টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য ঢাকা ওয়াসার অর্জন ও সরকারের অবদানকে হেয় করার শামিল।

টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্যে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে দাবি করা হয়। বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে দাবি করে এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসায় অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গতকাল বলেন, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় যেটা চলছে টকশোতে আমি সেটিই বলেছি। সেখানে আমি বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছি। এটা শুধু আমার একার বক্তব্য নয়। এটা পুরো বোর্ডের বক্তব্য। তারা মন্ত্রণালয়ে আমার যে বক্তব্য তুলে ধরেছে টকশোতে আমি সেটিই বলেছি, আমি সেখানে সত্য কথাই বলেছি। তিনি আরো বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি ইউনিয়ন মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দিয়েছে তা তারা নিজেদের ইচ্ছায় দেয়নি। তারা এমডির চাপে দিয়েছে। কারণ আমার বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো স্বার্থহানি হয়নি। ফলে ওয়াসার কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন না। তারা চাপের মুখে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খানকে গতকাল ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসায় সব সময় বোর্ড চেয়ারম্যান ও এমডির মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বোর্ড চেয়ারম্যানের কিছু উদ্যোগের কারণে এমডি তাকসিম ক্ষুব্ধ। তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াসা প্রশাসনের কিছু বিষয়ে বোর্ড হস্তক্ষেপ করে। এসব কারণে হয়তো বোর্ড চেয়ারম্যানকে চাপে রাখতে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। যারা অভিযোগ দিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ এমডির অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এমনকি আগেও একবার ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে গত বছরের ৩০ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে ওয়াসার প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কাজে বোর্ড চেয়ারম্যানের অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছিল।
২০২২ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে বোর্ডের নিয়মিত সভা করতে ওয়াসা প্রশাসন অসহযোগিতা করেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। ওয়াসা প্রশাসনের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনা করতে বিশেষ জরুরি সভাও আহ্বান করেছিল বোর্ড। তবে শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি। টক শোতে অংশ নিয়ে এই বিষয়টিও আলোচনা করেন বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

আইন অনুযায়ী, ওয়াসার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। আর সাধারণ কার্য পরিচালনা করে ওয়াসা প্রশাসন। ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ৬ ধারায় বোর্ড গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। ওয়াসা বোর্ডে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ওয়াসার আওতাধীন এলাকার সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার প্রতিনিধিরা সদস্য হন। এই সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সরকার বোর্ড চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। ওয়াসার এমডি পদাধিকার বলে বোর্ডের সদস্য হন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ