• রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চা উৎপাদন ব্যাহত

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩

দেশব্যাপী চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে মৌলভীবাজারের চা শিল্প। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে লোডশেডিং আরও বাড়ছে।লোডশেডিং এখন দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী হচ্ছে। এতে উৎপাদন হ্রাস ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হবার শঙ্কায় রয়েছেন চা সংশ্লিষ্টরা।

তবে, মৌলভীবাজারের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, এ ধরনের পরিস্থিতি অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চা পাতা উৎপাদন প্রক্রিয়া খুবই স্পর্শকাতর। এর প্রক্রিয়া কোথাও থেমে গেলে ওই পাতা নষ্ট হয়ে এর মান নষ্ট হয়ে যায়। এখন চায়ের ভরা মৌসুম। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চায়ের উৎপাদন। শঙ্কা দেখা দিয়েছে চায়ের গুণগত মান রক্ষা নিয়েও। এর প্রভাব পড়বে চা রফতানি বাজারেও। চায়ের মান খারাপ হলে রফতানিও করা যাবে না। এতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি চায়ের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলাতেই রয়েছে ৯২টি। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হয় এখানকার চা। তবে হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের কারণে সংকটে পড়েছে এই চা শিল্প।

জেলার বিভিন্ন চা বাগান কারখানায় গিয়ে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে প্রতি ১৬ ঘণ্টায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা এবং ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিকেলে ও রাতে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় চাহিদামতো চা উৎপাদন হচ্ছে না। বর্তমানে অনেক কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতার ৬০ শতাংশ চা উৎপাদন হচ্ছে। বৃষ্টি কম হওয়া ও লোডশেডিংয়ের কারণে বাকি ৪০ শতাংশ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।

কয়েকটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগান থেকে পাতা উত্তোলনের পর থেকেই বিদ্যুতের প্রয়োজন। এই কাঁচা পাতা ফ্যান চালিয়ে একটানা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা টার্ফে রাখতে হয়। তারপর মেশিনে তুলতে হয় তখন যদি একঘণ্টা চলার পর মেশিন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পাতা মেশিনে আটকে নষ্ট হয়ে যায়। এই মুহূর্তে যে বাগানে চা পাতা একেবারেই কম তাদেরও ৭ থেকে ১০ হাজার কেজি পাতা আসে ফ্যাক্টরিতে। এসব পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এ কারণেই ২৪ ঘণ্টা কারখানা চালু রাখতে হয়। পাতা সংরক্ষণ করে দিনেরটা দিনেই প্রোসেস করতে হয়। তাই লোডশেডিংয়ের জন্য সামগ্রিকভাবে বেশ ক্ষতি হচ্ছে।

চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে লোডশেডিং তীব্র হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এই সময় প্রতিটি বাগানের ফ্যাক্টরিতে ক্ষেত্রভেদে হাজার হাজার কেজি চা পাতা আসে প্রক্রিয়াজাতের জন্য। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে এই কাঁচা পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে সমস্যায় পড়ছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

শমশেরনগর চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই চা পাতা উৎপাদন কম হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকদিনের লোডশেডিংয়ে চা উৎপাদন আরও কমে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে ১০০ ভাগের জায়গায় ৬০ শতাংশ চা উৎপাদন হচ্ছে। এ কারণে করখানাগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জি এম শিবলী বলেন, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে আমাদের সবগুলো বাগানেই চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মীর গোলাম ফারুক জানান, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষেরা অনেক বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বৃষ্টি হলে বা তাপমাত্রা কমে এলে এই সমস্যা দূর হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ