বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামীকাল সোমবার। এ লক্ষ্যে আজ সকালে নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সরঞ্জামাদি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন প্রিসাইডিং অফিসারেরা।
এদিকে, বরিশাল নগরীতে এখনও বিপুল সংখ্যক বহিরাগত রয়েছে এবং তারা সুষ্ঠু ভোটে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রার্থীদের। বিভিন্ন বস্তিতে ক্ষমতাসীনরা অর্থ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
বরিশাল সিটির ১২৬টি কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে এবং ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন। সকালে নগরীর শিল্পকলা একাডেমি থেকে সব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে ভোটের সরঞ্জামাদি বুঝিয়ে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোটের সরঞ্জামাদি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা।
নগরীর ৬০ নম্বর জিলা স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন জানান, সারা দিন এবং রাতভর কেন্দ্রে অবস্থান করে আগামীকাল সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু করবেন তারা। বিরামহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে, ভোটের আগের দিন নানামুখী আশঙ্কার কথা বলেছেন সরকার বিরোধী প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সকালে নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, নগরীতে এখনও প্রচুর বহিরাগত অবস্থান করছে। তারা সুষ্ঠু ভোটে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এবং সাবেক মেয়র পুত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন। তারা সকল বাধা এবং হুমকী উপেক্ষা করে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও কোন ধরনের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ অস্বীকার করে দুপুরে সদর রোডের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। আমার দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি স্বাভাবিক। চমৎকার পরিবেশ। এখানে কোন রকম অস্বাভাবিক পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর স্বাধীনতা বিরোধী ছারছিনা পীরের কাছে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ছারছিনা পীর বঙ্গবন্ধুর মায়ের (প্রার্থীর নানী) আত্মীয়। তিনি বলেন, আত্মীয়তা এক বিষয় এবং রাজনীতি আলাদা বিষয়। আত্মীয় তো থাকতেই পারে। সে আমাকে দাওয়াত দিয়েছে আমি যাবো এটাই তো স্বাভাবিক।
প্রার্থীদের নানা অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বহিরাগত এবং ভোটারদের অর্থ দেয়ার বিষয়ে কোন প্রার্থীর অভিযোগ পাননি। সাংবাদিকদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনলাম। এখন দেখবো কে কোথায় আছে। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রভাবমুক্ত এবং সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু করতে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩টি ওয়ার্ডে ১ জন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ (ঝূঁকিপূর্ণ) ১০৬টি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন সদস্য এবং সাধারণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। পর্যাপ্ত টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২ হাজার ৬০৪ জন পুলিশ, ১ হাজার ৮৩০ জন আনসার ছাড়াও ১০ প্লাটুন বিজিবি, ১৬ প্লাটুন র্যাব এবং কোস্টগার্ডের ৩টি দল নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের কোন সদস্য ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য অতি উৎসাহ দেখালে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এবার বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে ভোট দেবেন তারা। সিটি নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৯ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪২ জন।