• বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপজয়ী মেসির ৩৬তম জন্মদিন আজ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসির ৩৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি। জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির সংসারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম নেন এই তারকা।

এখন যে মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব সেই মেসির শৈশবটা ছিল খুবই কঠিন। ১১ বছর বয়সে তার শরীরে গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা দেখা দেয়। সমস্যা আরও বাড়ে কারণ তার বাবা মার চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায়। সেই চিকিৎসার জন্যই বার্সেলোনা পাড়ি দেয় মেসির পরিবার।

মেসির সুপারস্টার হওয়াটা সেই বার্সাতেই ছিল বলেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা স্পেনের এ শহরে নিয়ে যান তাকে। একাডেমি হয়ে মেসি ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল স্কোয়াডে সুযোগ পান। এরপরের গল্পটা সবার জানা। গত ২ দশকে ফুটবল শৈলীতে বিশ্বকে মোহিত করে রেখেছেন লিও।

লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট সাতবার ব্যালন ডি’অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি তিনি সর্বোচ্চ ছয়বার ইউরোপীয় সোনালী জুতো জয়েরও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবনের পুরোটাই কেটেছে বার্সেলোনায়। যেখানে তিনি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। এছাড়াও একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল (৪৪০), লা লিগা ও ইউরোপের যেকোনো লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৫০), ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩), এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোল (৯১), এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল (২৬) এবং লা লিগা (৩৪) ও চ্যাম্পিয়নস লিগে (৮) সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত।

তিনি লা লিগা (১৮৩) এবং কোপা আমেরিকার (১২) ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলে সহায়তাকারীর কৃতিত্বেরও মালিক। জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে তিনি ৭০০ এর অধিক পেশাদার গোল করেছেন।

মধ্য আর্জেন্টিনায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মেসি ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সেই সময় আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবের পক্ষে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়ায় ১৩ বছর বয়সে তিনি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং স্পেনে পাড়ি জমান। বার্সেলোনার যুব প্রকল্পে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে তাঁর অভিষেক হয়। পেশাদার ফুটবল জীবনের শুরুতে ইনজুরি-প্রবণ হলেও, ২০০৭ সাল নাগাদ তিনি নিজেকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেন। তিনি ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারে তৃতীয় ও ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরবর্তী বছর তিনি উভয় পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং এর পরের বছর তিনি প্রথমবারের মতো উভয় পুরস্কার জয় করেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার মূল দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সে মৌসুমেই তিনি বার্সেলোনাকে প্রথমবারের মত এবং প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন।

মেসির সেরা মৌসুম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে তাঁর সেরা মৌসুম ছিল ২০১১-১২। সেই মৌসুমে তিনি লা লিগা এবং ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

তাঁর প্রতিভার আরেকটি ঝলক দেখা যায় ২০১৪-১৫ মৌসুমে, যখন তিনি লা লিগা ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনাকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন। ২০১৮ সালের আগস্টে মেসি বার্সেলোনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মেসি আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০০৫ ফিফা ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে সাহায্য করেন। যে প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে ফুটবলে স্বর্ণপদক জয় করেন। ২০০৫ সালের অগাস্টে তার আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। (২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ) এ গোল করার মধ্য দিয়ে তিনি সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০০৭ কোপা আমেরিকায় তিনি সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। ওই আসরে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।

২০১১ সালের আগস্টে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে টানা তিনটি প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছেন। ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০১৫ কোপা আমেরিকা এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকা। তিনি ২০১৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পুরস্কার জয় করেন। ২০২১ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা তার নেতৃত্বে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২২ সালে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২০ ইউরো জয়ী ইতালির বিরুদ্ধে ফিনালিসিমা এবং ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ