পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে। আবার এখানে বিনিয়োগ করলে মুনাফার সম্ভাবনাও বেশি। তাই বাজারের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান এবং বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের দুটি ধ্বস আমাদের খুব কাবু করে দিয়েছিল। এ ধ্বসের পেছনে মূল কারণ ছিল আইনগত ত্রুটি ও নীতিমালার দুর্বলতা। তাই আমরা পুঁজিবাজারের আইনগত দুর্বলতা দূর করতে কাজ করেছি। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে কয়েক বছর সময় দিয়ে আইনগত উন্নয়নের পাশাপাশি নীতিমালায় সংস্কার এনেছি। এখন পুঁজিবাজারের আইনি অবকাঠামো অনেক উন্নত। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক দিন ধরেই বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছি। বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের কাঠামো দরকার তা এখন হয়েছে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জেনে, বুঝে ও পড়াশোনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় আমিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি। মুনাফা করেছি, টাকাও হারিয়েছি। তবে ২০০২-০৩ সালের পর আর বিনিয়োগ করিনি। ব্যাক্তিগত কারণেই আমি বিনিয়োগ করিনি।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর সাকিব আল হাসান বলেন, কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় দেখেছি, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে তারা পড়াশোনা করছে। বাজারে বিনিয়োগের জন্যই তারা পড়াশোনা করে। আমাদের বিনিয়োগকারীদেরকেও পড়াশোনা করে বিনিয়োগ করা দরকার। কারণ দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনাদের বিনিয়োগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই না জেনে ও না বুঝে বিনিয়োগ করবেন না।
সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধ্বসের পর নানা ধরনের আইনগত সংস্কার হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ফলে এখন আর আগের মতো ঘটনা ঘটবে না। তবে সেজন্য বিনিয়েগকারীদেরকেও প্রশিক্ষিত হতে হবে। এজন্যই সরকার শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এর পাশাপাশি তিনি পুঁজিবাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসার ব্যাপারে তাগিদ দেন। তবে সেক্ষেত্রে এসব প্রোডাক্টের ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশদভাবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন। সবশেষে মো. ইউনুসুর রহমান পুঁজিবাজার বিষয়ক শিক্ষাকে পাঠ্যপুস্ককে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের আইনে নানা সংস্কার আনা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজড (স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ) করা হয়েছে। বিভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে আমাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে। তাই আগামীতে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠান শেষে একটি র্যালি বের করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে আজ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি আইসিবির কয়েকটি জেলা শাখাও তাদের শাখাগুলোতে সেমিনার করবে। এছাড়া এছাড়া সপ্তাহব্যাপী পুঁজিবাজার বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে সেমিনারের।