গত বছর ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৪০ সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুগলা শহরের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয় বলে বেসরকারি তুর্কি সংবাদ সংস্থা দোগানের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।
মুগলা শহরের নিকটবর্তী বিলাসবহুল অবকাশ যাপন কেন্দ্র ভূমধ্যসাগরীয় মারমারিস বন্দরনগরীতে এরদোগান সপরিবারে অবস্থানকালে গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে তার হোটেলে হানা দিয়েছিলেন বিপথগামী সেনারা।
দণ্ডিতদের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাসহ ৩১ জনের প্রত্যেককে চারবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোখান সাহিন সনমেজেতেস ও সাবেক এলিট কমান্ডো জাকারিয়া কুজু রয়েছেন। বাকি নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দণ্ডিতদের মধ্যে এরদোগান হত্যাচেষ্টার প্রধান অভিযুক্ত ও তার সাবেক সামরিক সচিব আলি ইয়াজিসি রয়েছেন। তাকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এই মামলা থেকে শুধু একজন খালাস পেয়েছেন। তিনি হলেন সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হুসেই ইলমাজ।
গত বছরের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় বিচার হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এরদোগানকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি শুরু হয়।
এর মধ্যে অবশ্য নিম্নপদস্থ বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে হত্যাচেষ্টা মামলাটিই প্রথম যাতে শীর্ষ ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার শুরু হল।
আলজাজিরার তুরস্ক প্রতিনিধি সিনেম কুসুগ্লু বলেন, ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার রাতে শুধু প্রেসিডেন্ট এরদোগানই নন, তার গোটা পরিবারেরই জীবনের ঝুঁকি ছিল। কারণ ওই সময় এরদোগানের কন্যাগণ, তার স্বামী ও সন্তানেরাও তার সঙ্গে অবকাশ যাপন করছিলেন।
উল্লেখ্য, ওই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় ২৪৯ নিহত হয়েছিল। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সবাইকে বিচার করার ব্যাপারে কোনো আপস করা হচ্ছে না।
এরদোগান সপরিবারে মারমারিসের গ্র্যান্ড ইয়াজিসি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তাকে হত্যার জন্য অভ্যুত্থানপন্থী সেনারা অভিযান চালালে পাহারারত দুজন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
তাদের একজন গুজেল আকরের মা নাদিপ চেনগিজ আকের রায়ের পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বলে জানায় রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলু।
নাদিপ বলেন, আমার ভেতরে আগুন জ্বলছিল। কিন্তু অভিযুক্তরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ায় আমি খুশি হয়েছি।
উল্লেখ্য, অভ্যুত্থান ঘোঘণার খবর পেয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান মারমারিস থেকে বিমানে করে তার নিজ শহর ইস্তানবুলে সরে পড়েন। এর কয়েক মিনিট পর গ্র্যান্ড ইয়াজিসি হোটেলে পৌঁছেন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসা সেনারা।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেয়ার কয়েক দিন পর সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে এরদোগান বলেন, আমি যদি হোটেলটিতে আর ১০ বা ১৫ মিনিট থাকতাম, তা হলে আমি হয়তো নিহত হতাম বা আমাকে তারা ধরে নিয়ে যেত।