• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

আরসার আস্তানায় মিলল সোয়া ৪৩ কেজি বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কক্সবাজারের উখিয়ার পাহাড়ি আস্তানা থেকে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গান কমান্ডার এবং বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আরসা’র অন্যতম কমান্ডার রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।

ওই সময় তাদের কাছ থেকে ৪৩ কেজি ৩১০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ওয়ান শুটার গান, ৪টি পিস্তলের বুলেট, ৩টি ওয়ান শুটার গানের বুলেট এবং ২টি বাটন মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দিনগত রাতে উপজেলার পালংখালীর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তেলখোলা-বরইতলী গহিন পাহাড় থেকে আরসা’র দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে তেলখোলা- বরইতলী গ্রাম থেকে অন্য দুজনকে ধরে র্যাব।

ধৃতরা হলেন হাফেজ আহমদের ছেলে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-১৮ এর অন্যতম কমান্ডার ও আরসার জিম্মাদার রহিমুল্লাহ প্রকাশ ওরফে মুছা, মৃত বদিউল আলমের ছেলে ক্যাম্প-৪ এর আরসার অন্যতম কমান্ডার শামছুল আলম প্রকাশ মাস্টার শামসু (২৯), কক্সবাজারের মো. জাফর আলমের ছেলে মো.শফিক (২৮) ও মৃত আবদুস সালামের ছেলে মো.সিরাজ (৩০)।

র্যাবের থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ধৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জনের মধ্যে আরসার সঙ্গে দুজন সরাসরি সংশ্লিষ্ট। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। অন্য ২ জন আমাদের দেশের।
ধৃতরা ক্যাম্প ও আশপাশে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এসব কাজের জন্য তারা মিয়ানমার থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান করে বলে জানা যায়।
ধৃত শফিক ও সিরাজ বিস্ফোরক দ্রব্য কৌশলে সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিয়ে এসে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করে এবং সুবিধাজনক সময়ে আরসা’র সন্ত্রাসীদের নিকট সরবরাহ করে থাকে। উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্যে ক্লোরেটস, ব্রোমেটস, পটাশিয়াম ও হেক্সামিথাইলিন টেট্রামাইন জাতীয় রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা গান পাউডার বা উচ্চ বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার হয়। উপাদানসমূহ বিস্ফোরণের সময় সহায়ক হিসেবে অতি অল্প সময়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত করতে সক্ষম। বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে বোমা প্রস্তুত করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য শরণার্থীশিবিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার কর হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রহিমুল্লাহ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে শরণার্থীশিবির ও স্থানীয় জনগণের নিকট হতে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করত। চাঁদার অর্থ না পেলে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা ভিকটিমকে খুন করে গহিন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করে তারা।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আরসা কমান্ডার রহিমুল্লাহ ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করেন। প্রথমদিকে তিনি ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকলেও ২০১৮ সালে আরসা’র নেতা খালেদের মাধ্যমে ‘আরসা’ এ যোগ দেন। আরসা’র নেতা হাফেজ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্য রয়েছে।

এ ছাড়া আবু আনাস, মোহাম্মদ হাসান, খালেদসহ বেশ কিছু আরসা’র শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার পরিচয় ও সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি অস্ত্র ও বোমা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বোমা তৈরিতে ও অস্ত্র চালনায় বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় আরসার গান কমান্ডার ও ক্যাম্প-১৮ এর জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পায়। তিনি আরসা’র অন্যান্য সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিত। তার নেতৃত্বেই বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্প এর আরসার সদস্যরা খুন, টার্গেট কিলিং, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালায়।

তিনি হেড মাঝি আজিম উদ্দিন হত্যাকাণ্ড, সাব মাঝি জাফর হত্যাকাণ্ড, এপিবিএন পুলিশের ওপর হামলা, মাদ্রাসায় হামলা করে নৃশংসভাবে ০৬ জন শিক্ষক ও ছাত্রকে হত্যা, জসিম হত্যাকাণ্ড, হেড মাঝি শফিক হত্যাকাণ্ড, মৌলভি সামশুল আলম হত্যাকাণ্ড, নুর হাসিম ও নূর হাবা হত্যাকাণ্ড, সাব মাঝি আইয়ুব হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন এবং একজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিল বলে জানা যায়।তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে ১২ টির অধিক মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।

অপর আরসা কমান্ডার মাস্টার শামসু ২০১২ সালের শেষে দিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশপূর্বক শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করে। তিনি ২০১৩ সালে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে এবং ২০১৮ সালে পুনরায় বাংলাদেশে ফেরত এসে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি ২০১৯ সালে মৌলভি জাবেদের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আরসা’য় যোগ দেয়। আরসা’য় যোগদানের পর সে অস্ত্র চালনা ও রণকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ লাভ করে। পরবর্তীতে ক্যাম্প-৪ এর অন্যতম কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পায়। তিনি হেড মাঝি হোসেন ও কামাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার এর উখিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে এবং সে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

এ ছাড়া মো. শফিকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সদর থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে এবং দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেছেন এবং ধৃত মো. সিরাজ শফিকের আমদানি করা বিস্ফোরক দ্রব্যাদি তার টমটম গাড়ির মাধ্যমে বহন করে আরসা’র শীর্ষ নেতাদের নিকট সরবরাহ করতেন।

র্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ