বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গুর কার্যকরী টিকা তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, টিকা নিয়ে গবেষণা কিন্তু বিশ্বব্যাপী চলছে। এরই মধ্যে দুটি টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সেই টিকাগুলো ব্যবহার হয় না, টিকাগুলোতেও আবার কিছু সমস্যা আছে। চার ধরনের ডেঙ্গু আছে, ভাইরাস আছে। টিকা নিলে দেখা যায়, কিছু ভাইরাস দমনে হচ্ছে, কিন্তু সব ভাইরাস দমন হয় না। আর যারা একবার ডেঙ্গুর টিকা নিয়েছে, তাদের অন্য ভাইরাসে আক্রমণ করলে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার হচ্ছে না।
শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার গড়পাড়ায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এসেই শুনতে পেলাম আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরীক্ষামূলকভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে। সেটা এখনও পরীক্ষায় রয়েছে। তারা বলছে, তাদের এই টিকা বেশ কার্যকর। আমাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নেব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিলে আমরা এ টিকা ব্যবহার করত পারব। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গুর কার্যকরী টিকা তৈরি হয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু স্থিতি আছে, আর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন প্রায় ৭ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এখন স্যালাইনেরে কোনো ঘাটতি নেই। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ৭ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে ৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। বাকি ৪ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চালানও দ্রুত চলে আসবে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন রিসিভ করছি এবং হাসপাতালগুলোতে দিচ্ছি। এছাড়া বেসরকারি ওষুধ উৎপাদন কোম্পানিগুলো স্যালাইনের উৎপাদন এখন অনেকগুণ বাড়িয়েছে। আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তারা মাসে ৫৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করতে পারে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজন ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন। ডেঙ্গু আক্রান্তের হার যদি বর্তমানের চেয়ে বেড়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে স্যালাইনের প্রয়োজন হবে ৩০ লাখ ব্যাগ। সে কারণে আমি মনে করি, এখন আর সেইভাবে হাহাকার বা ঘাটতি নাই। আমরা চাই, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাক।
জাহেদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু রোগী তো আছে, তবে জনসাধারণকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দেরি করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে তখন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলাও কঠিন হয়ে যায় ও অনেক সময় রোগী মারাও যান। সেই জন্য তাড়াতাড়ি ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। তবে আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে আমাদের দেশে ডেঙ্গু কমে যাবে।
জাতিসংঘ অধিবেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ের অনেক দিক নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা মহামারি হয়েছে, আগামীতে কোনো ধরনের মহামারি এলে তা কী উপায়ে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যক্ষ্মার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশ যেন শতভাগ যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে আগের চেয়ে এখন প্রায় ৫০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী কমে গেছে। যক্ষ্মার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য আছে, আমরাও ২০৩০ সালের মধ্যেই যক্ষ্মার শতভাগ নির্মূল করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যে যক্ষ্মা, চক্ষু ও কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটি উদ্যোগ, সেটি জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। যেটার নাম ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাকে গ্লোবাল হেলথ ফোরামের কোচ চেয়ারম্যান হিসেবে আহ্বান করা হয়েছে। এখন তিনি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন।
তিনি বলেন, কিউবাতেও আমরা গিয়েছিলাম, আপনারা জানেন। সেখানে ৭৭টি দেশের সঙ্গে সভা হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ ভালোভাবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিতে পেরেছে।