দক্ষিণ আফ্রিকা সফরই কি অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিমের শেষ! পচেফস্ট্রুম আর ব্লুমফন্টেইনে বাংলাদেশ দলের ভুলে যাওয়ার মতো পারফরম্যান্স। মুশফিকের কিছু মন্তব্য ও এর ফলে বিসিবিতে ক্ষোভ—এমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের মতে, টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে এখনই মুশফিককে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি মনে করেন, যে খেলোয়াড়টি টেস্ট ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে পারফরম করেছে, দেশকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিপক্ষে দেশকে জিতিয়েছে, তাঁকে কেবল একটি সফরের বিচারে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি হবে রীতিমতো আত্মঘাতী।
প্রথম আলোকে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বলেছেন, ‘মুশফিকের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, সে বেশ বিচলিত অবস্থায় আছে। বেশ চাপে আছে। সে কারণেই আবেগপ্রবণ হয়েই সে কিছু কথা বলে ফেলেছে। বোর্ডের উচিত ওর এই কথাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা। একজন অধিনায়ক কোন পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুমের কথাবার্তা সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে ফেলে, সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।’
মুশফিক টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছেন বলেই মনে করেন আমিনুল, ‘আমি বিশ্বাস করি, একটি টেস্ট দলের অধিনায়ককে হতে হবে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে কি সেটা ঘটছে? সে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান। সে আবার উইকেটকিপিংও করে। অধিনায়ক হিসেবেও তাকে চাপ নিতে হয়। তিনটি কাজেই অসম্ভব মানসিক শক্তির দরকার হয়। এ জন্য মানসিকভাবে ভারমুক্ত হতে হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট মুশফিককে ভারমুক্ত থাকতে দিচ্ছে বলে আমি মনে করি না। চাপে পড়েই সে মুখ খুলেছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দুটি টেস্টে টসে জিতে মুশফিক বোলিং নেওয়ায় বেশ অবাক হয়েছেন আমিনুল। পচেফস্ট্রুমের টেস্ট ম্যাচটি না হয় প্রথম ম্যাচ ছিল, ব্লুমফন্টেইনে তিনি কীভাবে একই কাজ করলেন বুঝতে পারছেন না বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, ‘সিদ্ধান্ত দুটি মুশফিকের ছিল বলে আমি মনে করি না। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের মস্তিষ্কপ্রসূত। চরম নেতিবাচক একটা ভাবনা। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে দক্ষিণ আফ্রিকা তো দুদিন ব্যাটিং করবেই। আমরা পরে ব্যাটিং করে যদি একটু ভালো করি, তাহলে ম্যাচটাকে ড্রয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যাবে। এমন নেতিবাচক পরিকল্পনা নিয়ে কোনো দল টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে পারে না। টসে জিতে ব্যাটিং নিলে দুটি ম্যাচের পরিস্থিতি অন্য রকম হলেও হতে পারত।’
টসের সিদ্ধান্তটা যারই হোক, এতে অবশ্য মুশফিকের দায়ভার দেখছেন আমিনুল, ‘অধিনায়কের যদি এ বিষয়ে ভিন্নমত থাকত, তাহলে তাঁর অবশ্যই এটা নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। এটা ঠিক, পেছনে থেকে যারাই কলকাঠি নাড়ুক, এই সিদ্ধান্তের দায়ভার মুশফিককেই নিতে হবে।’
মুশফিককে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে চান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। তাঁর মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মুশফিকের ক্যারিয়ারের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে, ‘ওকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। মুশফিক খুবই আবেগী ক্রিকেটার। হুট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ওর খেলার ওপর প্রভাব ফেলবে, সেটা হতে দেওয়া উচিত নয়। ওর সঙ্গে সবার বসা উচিত। অধিনায়কত্ব যদি আসলেই ওর ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ও নিজেই নিক।’
মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে সমালোচনা আছে—এটা মানেন আমিনুল। কিন্তু তিনি সামনে নিয়ে আসতে চান তাঁর অধীনে বাংলাদেশের সাফল্যগুলোই, ‘মুশফিক অনেক সময় বাংলাদেশ দলের শক্তি অনুযায়ী অধিনায়কত্ব করে। সিদ্ধান্তগুলো ওভাবেই নেয়। ওর আগ্রাসনের অভাব নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। যাঁরা এমনটা বলেন, তাঁরা এক দিক দিয়ে ঠিক। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আগ্রাসী হওয়ার মতো কতটা স্বাধীন সে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। সে যদি আগ্রাসী না-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে ওভাবে হারাল? মুশফিককে হুট করে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার আগে আমাদের সকলের উচিত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা।’