দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোনোভাবেই কমছে না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে চলতি মাসের (অক্টোবর) ছয় দিনে ডেঙ্গুতে ৭৫ জনের মৃত্যু এবং ১৫ হাজার ২৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরের প্রথম দিনে ডেঙ্গুতে ১৭ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ৮৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ২ অক্টোবর ১১ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত দুই হাজার ৫৯৬ জন, ৩ অক্টোবর ১৩ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত দুই হাজার ৭৯৯ জন, ৪ অক্টোবর ১৬ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত দুই হাজার ৫৬৪ জন, ৫ অক্টোবর ৯ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত দুই হাজার ৬১৭ জন, ৬ অক্টোবর ৯ জনের মৃত্যু এবং এক হাজার ৮০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে চলতি মাসের প্রথম ছয়দিনে ৭৫ জনের মৃত্যু এবং ১৫ হাজার ২৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে মাসিক পরিসংখ্যানে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে সেপ্টেম্বরে। মাসটিতে ৩৯৬ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।
এ ছাড়া জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ছয়জন। ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মৃত্যু তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও ১১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এপ্রিলে দুইজনের মৃত্যু এবং ১৪৩ আক্রান্ত হয়েছেন। মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন আক্রান্ত এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এই পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে ১৩ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ২২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু জুন মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু এবং ৫ হাজার ৯৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জুলাইয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু এবং ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আগস্টে ৩৪২ জনের মৃত্যু এবং ৭১ হাজার ৯৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, দেশে টানা কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টি ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম, সঙ্গে থাকছে ব্যাপক আর্দ্রতা। এমন আবহাওয়া এডিস মশা বৃদ্ধির অনুকূল। তাই এবার দীর্ঘ হতে পারে ডেঙ্গুর মৌসুম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এমন আবহাওয়ায় মশা আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি অক্টোবরজুড়ে থাকলে ডেঙ্গু মৌসুম দীর্ঘ হয়ে শীতকাল পর্যন্ত থাকবে। অক্রান্তের হার কমলেও বছরজুড়েই থাকবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬৭৯ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪ জন। এরমধ্যে ঢাকা সিটির ৬৭৫ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ৩৮৯ জন।