ভয়েস অব বিজনেস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের হাতে গড়া একটি সাময়িকী। আর এই সাময়িকী প্রকাশকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভয়েস অব বিজনেস (ভিওবি) নামের একটি সংগঠন। ২০০৭ সাল থেকে শুরু। এরপর প্রায় প্রতিবছরই প্রকাশিত হচ্ছে ভয়েস অব বিজনেস। করপোরেট দুনিয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ ও ভবিষ্যৎ প্রতিনিধিত্ব নিয়ে তাঁদের ভাবনা উঠে আসে এখানে। এ ছাড়া বর্তমানে যাঁরা করপোরেট দুনিয়ায় সফল, তাঁদের অভিজ্ঞতা আর পরামর্শও থাকে। এ বছর সেপ্টেম্বরে ভয়েস অব বিজনেসের অষ্টম প্রকাশনী ‘আ লিডারশিপ টেল: জার্নি টুওয়ার্ডস পিনাকল’ প্রকাশিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১২ ও ১৩ তারিখে ভয়েস অব বিজনেস উইক ২০১৭-তে সাময়িকীটি প্রকাশ করা হয়।
শুরুর গল্পটা জানা গেল সংগঠনের সদস্যদের মুখে। ২০০৭ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের একদল বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। অনেক দিন থেকেই তাঁরা ভাবছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের আটটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক ছাদের নিচে বসে কথা বলার মতো কোনো সংগঠন নেই। নেই করপোরেট বিশ্বের অনুসরণীয়দের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ। আছে শুধু ক্লাস, পরীক্ষা আর অ্যাসাইনমেন্টের চাপ। এই বন্ধুরাই ভিওবি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সংগঠনের বর্তমান সভাপতি তানভীর আহমেদ পড়ছেন ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিরা যে স্বপ্ন নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছেন আমরা সেটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। এ বছর আমরা প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছি। আশা করি, এই সংগঠন ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা ভয়েস অব বিজনেস ম্যাগাজিনটিকে তাঁদের মুখপত্র হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেন। প্রতিবছর এই প্রকাশনীর একটি স্বতন্ত্র থিম থাকে। এবারের অষ্টম সংখ্যাটিতে থিম ছিল ‘কৃষিভিত্তিক শিল্প’। এবারের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৩০টির মতো প্রবন্ধ। যেখানে আছে বিভিন্ন সাক্ষাত্কার, অভিজ্ঞতার বর্ণনা, পরামর্শ, ‘ভিওবি রাইটিং কনটেস্ট’-এর বিজয়ী লেখকের রচনা, আছে শিল্প ও ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মতো নিবন্ধ।
ভয়েস অব বিজনেসের এবারের সংখ্যার প্রধান সম্পাদক ছিলেন ফিন্যান্স বিভাগের নাজিফা তাসনিম। ম্যাগাজিনে তিনি লিখেছেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ কর্মস্থলকে ভালোভাবে না চিনলে আগামীতে সেখানে অসুবিধায় পড়বে। নিজের মেধা আর প্রতিভাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবে না। এই ম্যাগাজিনটি বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সত্যিকারের করপোরেট বিশ্বের পরিচয় ঘটানোর একটি প্রয়াস।’
প্রতিবছর নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ভিওবির জন্য সদস্য বাছাই করা হয়। আগ্রহীদের তিন পর্বের বাছাই পরীক্ষায় নানা ধাপে প্রমাণ করতে হয় নিজেকে। সংগঠনটিতে বর্তমানে প্রায় ১০০ জন সদস্য আছেন। বর্তমানে সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম। এ ছাড়া একটি কার্যনির্বাহী কমিটিও আছে।
সংগঠনটির মুখ্য কাজের মধ্যে একটি হলো ম্যাগাজিন প্রকাশ করা। এ বছর ভিওবি প্রথমবারের মতো জাতীয় ব্র্যান্ডিং প্রতিযোগিতা ‘ব্রেইনড্রিল’ আয়োজন করে। এবারের প্রতিযোগিতায় সারা দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়। এ ছাড়া সংগঠনটি প্রতিবছর ‘ভিওবি রাইটিং কম্পিটিশন’ আয়োজন করে। যেখানে বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা বাণিজ্য নিয়ে তাঁদের ভাবনাগুলো জানানোর সুযোগ পান। বিভিন্ন সেমিনার, মতবিনিময় সভা ও কর্মশালাও আয়োজন করে এই সংগঠন।
সংগঠনটির নতুন সদস্য অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শোয়েবুর রহমান বলেন, ‘ভিওবি আমার কাছে শুধু একটি ক্লাব নয়, একটি পরিবারের মতো। আমার প্রত্যাশা, এখান থেকে ক্যারিয়ার আর লিডারশিপ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা পাব। এই সংগঠন থেকে অল্প দিনেই আমার প্রাপ্তি অনেক।’