১০ অক্টোবর তারিখটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য লজ্জা আর দুঃখের দিন। ‘অভিশপ্ত’ দিন বললেও খুব বাড়িয়ে বল হয় না। ভুটানের মতো দলের কাছে গত বছর এই দিনেই হারের তেতো স্বাদ নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। একটি হার যে একটি দেশের ফুটবলকে কতটা পিছিয়ে দিতে পারে, ২০১৬ সালের ভুটান-বিপর্যয় বোধ হয় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে দেওয়া সেই হার খুব বাজেভাবেই পড়েছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে। ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক র্যাঙ্কিংয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ফুটবল এখন ধুঁকছে।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে কেবল ১০ অক্টোবর নয়, আরও কয়েকটা তারিখ আছে, যেগুলো ভুলে যেতে পারলেই খুশি হন ফুটবলপ্রেমীরা।
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯
এই তারিখটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্নেরই। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে প্রেসিডেন্টস কাপ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বাগতিকদের সঙ্গে গোল-বন্যায় ভাসতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। কোরিয়ার কাছে ৯-০ গোলের হার এখনো আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরাজয়।
২৫ জুলাই ১৯৮৪
প্রথম সাফ গেমসের ফুটবলে বাংলাদেশের সোনা জয়কে অনেকেই সময়ের ব্যাপার বলেছিলেন। কারণ সেবার ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ফুটবলে অংশ নেয়নি। রাউন্ড রবিন লিগে স্বাগতিক নেপাল ও মালদ্বীপকে বাংলাদেশ উড়িয়ে দিয়েছিল ৫-০ গোলে। ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়েও গিয়েছিল সে সময় দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের পাওয়ার হাউসখ্যাত বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ গোটা দলের কী যেন হয়ে গিয়েছিল। গুনে গুনে ৪ গোল খেয়ে নেপালের কাছে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল। অভিশপ্ত দিনই তো ছিল সেটি!
২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৫
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় সাফ গেমস। চারদিকে উৎসবের আবহ। অনেকেই বলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই সাফ গেমসে বাংলাদেশ ফুটবলে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সটা উপহার দিয়েছিল। দলও ছিল দুর্দান্ত। গ্রুপপর্বে পাকিস্তানকে ২-১ আর মালদ্বীপকে ৮-০ গোল হারানো বাংলাদেশ ফাইনালে খেলেছিল ভারতের সঙ্গে। ভারতও ছিল যথেষ্ট ভালো দল। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের দুই জায়ান্টের লড়াই রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়েছিল সেদিন। প্রথমে ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে গেলেও শেখ মোহাম্মদ আসলামের দুর্দান্ত এক গোলে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে। অতিরিক্ত সময়ে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করা বাংলাদেশ টাইব্রেকারে সে ম্যাচটি হেরে যায় ৪-১ ব্যবধানে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তারকা সেদিন পেনাল্টি মিস করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, দ্বিতীয় সাফ গেমসের ফুটবলে সোনার পদক জিতে গেলে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাস অন্যভাবেই হয়তো লেখা হতো।
১১ এপ্রিল, ১৯৯৩
১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন গ্রুপে। জাপান, আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই লেগে ৮টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জয় পায় কেবল দুটিতে, তা-ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুটি লেগ অনুষ্ঠিত হয়ে জাপান ও আমিরাতে। জাপানের টোকিওতে বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তারিখটি ছিল ১১ এপ্রিল। সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮-০ গোলের বিরাট ব্যবধানে।
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
বেশি দিন আগের কথা নয়। গত বছর সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ প্রীতি ম্যাচ খেলতে মালদ্বীপে গিয়ে নিরন্তর লজ্জার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৫-০ গোলে। ভুটানের বিপক্ষে হার নিয়ে অনেক কথা হয়, কিন্তু মালদ্বীপের কাছে ৫ গোলের হার কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ফুটবলের আসল অবস্থাটা।