সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি॥
রবিবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের আলোচনায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে নারীর উৎপাদনমূলক ও সেবামূল কাজের মূল্যায়নের আহবান জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার মোহাম্মদ রায়হান। প্রধান অতিথি হিসেবে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে সিরাজগঞ্জের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এনডিপি আয়োজিত র্যালির উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটির এবছরের প্রতিপাদ্য ‘গ্রামীণ নারীর সামাজিক ক্ষমতায়ন’।
দিবসটি পালন উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল র্যালি, আলোচনা সভা, নারীর গৃহস্থালী দ্রব্যাদির ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনী ও গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। অনুষ্টানে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, গ্রামীণ নারী সহ প্রায় তিনশ জন অংশগ্রহণ করেন।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর সবুর শেখের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এনডিপি নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলাউদ্দিন খান। অন্যান্যদের মধ্যে ইউপি সদস্য জাকির হোসেন, জুলমত আলী, সচিব রেজাউল করিম, পাইকপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম, ক্রীড়া শিক্ষক শ্যামল কুমার দত্ত, এনডিপির প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ আব্দুল হালিম, প্রকল্প অফিসার শারমিন আক্তার, ফ্যাসিলিটেটর বিউটি খাতুন, রাজিয়া সুলতানা, আকলিমা খাতুন।
এনডিপি নির্বাহী পরিচালক বলেন, নারীর অআর্থিক যে কাজ সেগুলো সাধারণত দৃশ্যমান হয়না। আর সেবামূলক কাজ তো নারীর একান্ত করণীয় বলে মনে করা হয়। সমাজের সকল স্তরে আমাদের এই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটানোই আজকের এই দিবসের মূল মর্মবানী। এনডিপি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত মর্যাদায় গড়ি সমতা প্রচারাভিযানের আওতায় নারীর অআর্থীক কাজের মূলায়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধ এনডিপির একটি নতুন কর্মসূচী। প্রকল্পটি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় আগামী চার বছর কালিয়া হরিপুর ইনিয়নের সাতটি গ্রামে কাজ করবে। আজকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালনের মধ্যদিয়ে নারীরা তাদের অআর্থিক কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে পারছে। আমি মনে করি, ঘরের কাজে শুধু নারীরা নয়, পুরুষেরও অংশগ্রহণ করা উচিত।
সকাল সাড়ে নয়টায় কালিয়া হরিপুর ইউপি কার্যালয় থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে বর্ন্যাঢ্য র্যালী বনবাড়িয়া বাজার প্রদক্ষিণ করে ইউপি কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়। নারীর অদৃশ্য শ্রমের মজুরি, অর্থনৈতিক কাজে নারীর অবদান, সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন ইত্যাদি বার্তা সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন অংশগ্রহণকারীরা।
বিকেলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে প্রায় পয়ঁষট্টি জন গ্রামীণ নারী, রক্তচাপ পরীক্ষা, ওজন পরিপামসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানর ব্যতিক্রমী আয়াজন ছিল নারীর গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদির প্রদর্শনী। সুসজ্জিতভাবে প্রদর্শন করা হয় চুলা, হাড়ি, পাতিল, ঝাড়–, দা, বটি, কাঁথা, কোদাল, খুন্তি, চালনি, মাথাল, দড়ি, কাচি, টুকরি, নিড়ানি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসপত্র।
অনুষ্ঠানে আগত যুবক প্রাণ রহমান বলেন, আমাদের বাড়িতে মা, বোন ও অন্যান্য নারীরা সূর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত যে কাজগুলা করেন তার মর্যাদা আমরা অনেকেই দেই না। এমন মনোভাবই নারীর প্রতি সহিংসতার সৃষ্টি করে। তাই আমি মনে করি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারীর অদৃশ্য কাজের মূল্যায়ন করতে হাবে।