রিপোর্ট: আসাদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালী-বেলকুচি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে লড়বেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও তার মেয়ে জামাতা নুরুল ইসলাম সাজেদুল।
নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়তে একদিকে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের জামাতা নুরুল ইসলাম সাজেদুল। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তারা দুজনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারে। সেই অনুযায়ী এবং আমার সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাওয়ার ভিত্তিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু নেত্রী বলে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা যাবে, নির্বাচন করলে দলের কোনো বাধা নেই তাই আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অনুযায়ী আমি গত ২৮ নভেম্বর বিকেলে জেলা পরিষদের সচিবের (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) কাছে আমার পদত্যাগপত্রটি জমা দেই এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করি।
আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ১৯৯৬-২০০১ সাল ও ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি মহাজোট সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও। এই আসন থেকে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, সংসদ সদস্য নির্বাচন করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এরপর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলাম এবং জমাও দিয়েছি। আপনারা জামাই-শ্বশুর একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে কেউ নির্বাচন থেকে সরে আসতে আপনাদের মধ্যে সমন্বয় হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাত্র মনোনয়ন জমা দিয়েছি। এখনো যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে অনেক ধাপ আছে। এছাড়া আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেক প্রতিবন্ধকতাও থাকে। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত আমি নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছি।
নূরুল ইসলাম সাজেদুল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ দেশের প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর সিরাজুল ইসলাম। এরপর গত মাসের (নভেম্বর-২০২৩) ২৩ তারিখে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। যা ২৬ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গ্রহণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনে মমিন মন্ডল (নৌকা) পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬১ ভোট ও মো. আমিরুল ইসলাম খান (ধানের শীষ) পান ২৮ হাজার ৩১৭ ভোট।