• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন

আয়ের উৎস : বেল্ট তৈরি

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭

মানুষ লজ্জাস্থান নিবারণ ও শরীর ঢেকে রাখার জন্য পোশাক পরিধান করে। এই পোশাককে আরো একটু সৌন্দর্যমন্ডিত করতে বেশ কিছু জিনিস ব্যবহার করে থাকে। এরমধ্যে কোমর বন্ধনী বা বেল্ট এখন অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তরুণ ও অফিসিয়াল লোকদের জন্য এটা যেন না হলেই নয়। বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি অনেক আধুনিক মেয়েরাও এটা ব্যবহার করা শুরু করেছে। বেল্ট ছাড়া অনেকেরই সাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কোনো উপলক্ষ ছাড়াই প্রতিনিয়ত মানুষ এটা ক্রয় করে থাকে। তাই বছরজুড়েই এর চাহিদা অব্যাহত থাকে। স্বল্প পুঁজিতে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে যারা কোনো ব্যবসা শুরু করবেন বলে ভাবছেন, তাদের জন্য বেল্ট তৈরির ব্যবসাটা মন্দ নয়। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা কোন কারখানা থেকে হাতেকলমে শিখে আপনি দিতে পারেন বেল্ট তৈরির কারখানা।

প্রাথমিক কাজ
এই ব্যবসাটা দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত, আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে বেল্ট তৈরি করবেন অর্থাৎ নিজের ব্রান্ড। দ্বিতীয়ত, গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে তাদেরকে তৈরি করে দিবেন। যদি নিজে ব্রান্ড তৈরি করতে চান তাহলে একটি নাম নির্বাচন করে ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরে কিনতে হবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। জিনিসপত্রে পরিমাণটা ব্যবসার পরিধি ও পুঁজির ওপর নির্ভর করবে। বাসায় খালি ঘর থাকলেই বেল্ট তৈরির ছোট কারখানা করা যায়। তবে সেই ঘরটির সাইজ হতে হবে কমপক্ষে আট ফুট বাই আট ফুট। এছাড়া লাগবে চামড়া, রেক্সিন, আঠা, সেলাই মেশিন, বোর্ড কাগজ, ডাইস মেশিন ইত্যাদি।

শিখবেন কোথায়
বেল্ট তৈরির জন্য দুই ধরনের প্রশিক্ষণ নেয় যায়। সরকারিভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন তিন মাসের একটি কোর্স করায়। চাইলে সেখানে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। অথবা কোন কারখানায় কাজ করে বা তাদের সাথে মিশে বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন। আর বড় আকারে শুরু করতে চাইলে ভালো কারিগড় নিয়োগ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের মৌলিক জ্ঞানটুকু থাকলেই চলবে।
কাঁচামাল কোথায় পাবেন
জিনজিরা, চকবাজার, ইসলামবাগ, যাত্রাবাড়ী, বিবির বাগিচা, সায়েদাবাদ, রায়েরবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আছে বেল্টের ছোট-বড় কারখানা। ব্যবসা শুরুর আগে বেচা-বিক্রি আর কাঁচামাল সংগ্রহের খোঁজখবর এসব কারখানা থেকেই নিতে পারেন। সাধারণত সব রকমের কাঁচামাল পাওয়া যাবে সিদ্দিকবাজার, নবাবপুর, চকবাজার, বংশাল বা রাযেরবাজারে। মেশিন কেনার জন্য যেতে হবে ঢাকার বংশাল অথবা ধোলাইখালে।

কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির দরদাম
সেলাই মেশিন কেনা যাবে আট থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে। আর ডাইস মেশিন কিনতে খরচ পড়বে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিবার ডাইস বানাতে খরচ হবে এক থেকে তিন হাজার টাকা। এক গজ চার গিরা করে একেকটা চামড়া কেনা যাবে এক হাজার ৫শ থেকে এক হাজার ৮শ টাকার মধ্যে। একই মাপের রেক্সিন ৭শ টাকা। বুক্কা বা কাগজের বোর্ড ৩শ টাকা, তিন স্তরে বানানো বেল্টের নিচের অংশের চামড়ার দাম পড়বে ৫শ টাকার মতো। আঠা দুই কেজির বোতলের দাম ৭শ টাকা।

বেল্ট তৈরির পদ্ধতি
বেল্ট হয় তিন রকমের- শুধু চামড়ার, চামড়া ও রেক্সিনের ও শুধুই রেক্সিনের। চামড়ার বেল্টগুলো চামড়া কেটে সাইজ করে তার এক মাথায় বকলেস লাগালেই হয়ে গেল। কখনো কখনো ডাইস মেশিনের ছাপ দিয়ে নকশা করা হয়। চামড়া-রেক্সিনের তৈরি বেল্টগুলোর ওপর দিকে থাকে চমড়া আর নিচের অংশে রেক্সিন। দুইপাশ সেলাই দিয়ে বকলেস লাগালেই প্রস্তুত হয়ে যায়। আর রেক্সিনের বেল্টগুলোর কাজ হয় কয়েক স্তরে। বেল্টের মাপমতো কাগজ কেটে তার দুই পাশে রেক্সিন দিয়ে মড়িয়ে আঠা লাগাতে হয়। তারপর সেলাই করতে হয়। সবশেষে বকলেস লাগিয়ে দিতে হয়। তবে কোম্পানির নাম খোদাই করতে চাইলে ডাইসের বøকে রেখে ছাপ দিতে হবে।

আয় রোজগার
বেল্ট প্রস্তুতকারক কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, একজন লোক দৈনিক ৫০টি বেল্ট বানাতে পারে। পাইকারিভাবে প্রতিটি চামড়ার বেল্ট ১২০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়, রেক্সিন-চামড়ার বেল্ট বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। আর শুধুই রেক্সিনের বেল্ট বিক্রি করা যায় ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। আর প্রতিটি বেল্টেই ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ থাকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ