• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

সঙ্কটের মধ্যেও শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত

বিদায়ী বছর জুড়েই ছিল ডলার সঙ্কট। সাথে ছিল নগদ টাকারও সঙ্কট। এ কারণে এক শ্রেণীর ব্যাংক তাদের তহবিল সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। প্রায় প্রতি দিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলেছে। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে কাঙ্খিত হারে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারেনি। আবার খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বর্ধিত হারে মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষেণ করতে হয়েছে। এর পরেও বিদায়ী বছরে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই আগের বছরের চেয়ে মুনাফা বেড়েছে। নানা সঙ্কটের মধ্যেও বিদায়ী বছরে মুনাফার শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

রোববারের প্রাপ্ত তথ্য মতে, ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে জনতা ব্যাংক ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নানা কারণে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। বিদায়ী বছরে ব্যাংক ঋণের সুদের উর্ধ সীমা তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা বেড়েছে। আবার যেসব ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ওই সব ব্যাংকেরও বৈদেশিক বাণিজ্যে বেশি মুনাফা হয়েছে। এর বাইরে নানাভাবে ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াল করা হয়েছে। ঋণ খেলাপি হওয়ার পরেও নানা ভাবে তা নিয়মিত দেখানো হয়েছে। এতে বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়নি।
পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আলাদা হিসেবে না রেখে কেউ কেউ তা মুনাফা আকারে দেখিয়েছে। এভাবেই কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা বেড়েছে। তবে পরিচালন মুনাফাই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ, সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফার চেয়ে কৃত্রিম আয়ই বেড়ে গেছে বেশি হারে। খেলাপি ঋণ আদায় না করেই আদায় দেখানো হচ্ছে। আর এ বিপরীতে সুদ সরাসরি আয় খাতে নিয়ে যাচ্ছে। বলা চলে আয় না করেও ব্যাংকের কৃত্রিম আয় বেড়ে গেছে। আর এ কৃত্রিম আয় থেকেই ব্যাংকগুলো সরকারকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স দিচ্ছে। অবশিষ্টের বড় একটি অংশ ডিভিডেন্ড দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

তারা জানান, ব্যাংকগুলো এ কৃত্রিম আয় না বাড়িয়ে মূলধন কাঠামো ঠিক রাখতে বেশি হারে প্রভিশণ করলে ভালো হতো। কিন্তু এখানে কেউ কেউ পাল্লা দিয়ে মুনাফা বাড়িয়ে বাহাবা নেয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।

তারা মনে করেন, সামনে যে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ যত বেশি থাকবে ওই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তত বেড়ে যাবে। এতে বেকায়দায় পড়ে যাবে ওই ব্যাংক। ব্যাংকগুলো সঠিক হারে প্রভিশন করলে প্রকৃত মুনাফা না বেড়ে বরং কমে যেতো।

আজকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা ছিল ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকায়।

পূবালী ব্যাংক বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। সমাপ্ত বছরে রাষ্ট্রায়ত্বা জনতা ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। তবে আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯২৮ কোটি টাকা।

২০২৩ সালে ৪৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফ হয়েছিল ৪১৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৫২০ কোটি টাকা। একই সমেয় মেঘনা ব্যাংকের পরিচালর মুনাফা ৭৫ কোটি থেকে ১৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬০ শতাংশ। কারণ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে (২০২২) তা ছিল ১০৬ কোটি। ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে ৫৯৪ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা বেড়েছে রূপালীর। মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ৫৪৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৭৪৯ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৫৬১ কোটি টাকা। এছাড়া বিডিবিএল পরিচালন মুনাফা করেছে ২৫ কোটি টাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ