ভালো কাজ করার তাওফিক একমাত্র আল্লাহর হাতে। প্রকৃত মুমিন সর্বদা ভালো কাজ করার সুযোগে থাকে। সে প্রত্যাশা রাখে, এর মাধ্যমে জান্নাতে সর্বোচ্চ আসন লাভ করার। অনেক সময় বান্দা ভালো কাজ করার ইচ্ছা করলেও কোনো অজানা কারণে ভালো কাজ করতে পারে না।
আর আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তাকে নিজ অনুগ্রহে ভালো কাজের তাওফিক দান করেন। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যদি কোনো বান্দার কল্যাণ সাধন করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার সুযোগ দেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাকে মৃত্যুর আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)। নিম্নে আমরা এমন কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর কারণে ভালো কাজ করার তাওফিক লাভ হয়—
অব্যাহত প্রার্থনা
যে বান্দা আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ভালো কাজের প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করেন। এ জন্য বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা, হিদায়াত প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতেহার মধ্যে আমাদের সেটাই শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা প্রতি নামাজে প্রতি রাকাতে আল্লাহর কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করি। আমরা প্রতিনিয়ত বলি, ‘হে আল্লাহ, আমাদের সহজ-সরল পথে পরিচালিত করুন। ’
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১৩) হাদিসে এসেছে, আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা সবাই ছিলে দিশাহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ছাড়া। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করো আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৬৬)
অন্তর পরিশুদ্ধ করা
বিশুদ্ধ অন্তরকে আল্লাহ তাআলা ভালো কাজ করার তাওফিক দান করেন। কারণ অন্তর যখন পরিশুদ্ধ হয়, তখন তার সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, নুমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরাটি হলো কলব (অন্তর)। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫২)
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
পাপের কারণে বান্দা অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। কারণ হাদিসে এসেছে, বান্দা যখন পাপে লিপ্ত হয়, তখন তার অন্তর কর্দমাযুক্ত হয়ে যায়। সে অন্তর দিয়ে তখন কোনো ভালো কাজ করতে পারে না। এ জন্য যে ব্যক্তি পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখবে আল্লাহ তাআলা তাকে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)
মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা
মা-বাবার সঙ্গে অসৎ ব্যবহার করার অনেক অশুভ পরিণতি রয়েছে। এর মাঝে একটি হচ্ছে, যে ব্যক্তি মা-বাবার অবাধ্য হবে তাকে আল্লাহ তাআলা ভালো কাজ করার তাওফিক দেবেন না। আর যে ব্যক্তি তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে আল্লাহ তাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি রয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৯৯)
ভালো মানুষের সাহচর্য গ্রহণ করা
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাহচর্যে রয়েছে অনেক প্রভাব। যারা তাদের সাহচার্য গ্রহণ করবে তাদের আল্লাহ তাআলা ভালো কাজ করার তাওফিক দান করে থাকেন। এ জন্য রাসুল (সা.) ভালো মানুষের সাহচর্যের আদেশ করেছেন, আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২)
কল্যাণের কাজকে সৌভাগ্য মনে করা
অনেক সময় বান্দার সামনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন কল্যাণের দ্বার উন্মোচন করেন। এ ক্ষেত্রে বান্দা যদি এটাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালো কাজ করার আরো তাওফিক দান করেন। আর যদি নিজের জন্য বোঝা মনে করে তাহলে তার জন্য সামনের পথ সংকুচিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদের আরো বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞতা করো, তবে জেনে রেখো আমার শাস্তি অতি কঠিন। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
এ ছাড়া নেককার স্ত্রী, কোরআনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা, সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে বারণ করা, মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশুদ্ধ নিয়ত রাখা—এসব ভালো কাজের সৌভাগ্য অর্জন করার মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা আমাদের বেশি বেশি ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন