বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মধ্যে।
তারা বলেছেন, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ডলারের দরের অস্থিরতা কাটতে পারে। আবার হুন্ডি আর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে না পারলে কোনো কাজেই আসবে না ক্রলিং পেগ পদ্ধতি।
ডলারের বিনিময় হার পরিচালনা করতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার মুদ্রানীতির অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এ পদ্ধতি চালু হলে ডলার বাজার স্থিতিশীল হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, এ পদ্ধতির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয় এমন ১৫ দেশের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে স্থানীয় মূল্যস্ফীতির পার্থক্য বিবেচনায় নিয়ে গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় দর নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যার সঙ্গে যুক্ত করা হবে ডলারের দরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা। এ সীমার মধ্যেই ডলার বেচাকেনা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ডলারের বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করে দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্রলিং পেগ একটি মিক্সড ও ম্যানেজড সিস্টেম। এর মাধ্যমে বাজারে কিছু নির্দেশক দেওয়া থাকবে যে, এ দরের বাইরে যেতে পারবে না। এ দর কমবেশি হবে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ক্রলিং পেগ অনুযায়ী বাজারে ডলারের দর যখন কম থাকবে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী ডলার কিনে নেবে। আর যখন দাম বাড়বে তখন ডলার বিক্রি করে বাজার স্থিতিশীল রাখবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য বলছে, বিশ্বের ১৯৫ দেশের মধ্যে হন্ডুরাস, বতসোয়ানা ও নিকারাগুয়া বর্তমানে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এ তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) দর অনুসারে বর্তমানে ডলার কেনার কথা ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় আর বিক্রি ১১০ টাকায়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে অর্থাৎ ১২০ থেকে ১২১ টাকায় বিক্রি করছে ডলার। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকার ওপরে।
ক্রলিং পেগ চালু হলে ডলারের দাম কত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটা এখনই বলা মুশকিল। তবে আগে একটা দর দিয়ে শুরু করতে হবে। এ দরটা ১১০ টাকায় হবে না এটা বলতে পারি। ১১৫ টাকা হতে পারে আবার ১১৮ টাকাও হতে পারে। এভাবে নির্ধারণ করেই আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক রেট ও হুন্ডিতে ডলারের বিনিময় হারে ১৪ থেকে ১৬ টাকার মতো ব্যবধান আছে। ক্রলিং পেগের মাধ্যমে যে মুদ্রা বিনিময় হার দেওয়া হবে, যদি সেখানেও এ ব্যবধানটা থেকে যায় তাহলে ক্রলিং পেগ থেকে আপনি কোনো সুফল আশা করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে যেসব দেশ এসেছিল, তারা কেউ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। ক্রলিং পেগ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ আমি দেখছি না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটার সুবিধা আছে, ঝুঁকিও আছে। সুবিধা হলো চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রেখে এ পদ্ধতিতে বিনিময় হারটা স্থিতিশীলভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হারের যে দরটাই ঠিক করা হোক না কেন, মূল ইস্যু হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে যে পরিমাণ টাকা আসছে, এটা বন্ধ করতে হবে।’