রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতনের জেরে মিয়ানমারের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কাই আইনের আওতায় এই অবরোধ আরোপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার ওয়াশিংটন থেকে জারি করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্প্রতি যা ঘটেছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ অন্য সম্প্রদায় যে সহিংস ও ভীতিকর দুর্দশার শিকার হয়েছে, তাতে আমরা গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি।
এতে আরও বলা হয়, বেসরকারি ব্যক্তি ও আইনে হাতে নেয়া দুর্বৃত্তসহ সহিংসতার ঘটনার জন্য দায়ী যে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
গত ২৫ আগস্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে।
মিয়ানমার সেনাদের গণহত্যা-গণধর্ষণ থেকে বাঁচতে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের জন্য মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব দায়ী বলে গত মঙ্গলবার দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।
তবে নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে তা বলা থেকে বিরত ছিলেন টিলারসন।
তবে আগামী মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এ অঞ্চলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরকে সামনে রেখে সোমবার পররাষ্ট্র দফতর করণীয়র ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছে।
যা কয়েক মাস ধরে চলা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের সময়ে বাতিল করা ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কঠোর অস্ত্র বড়সড় অর্থনৈতিক অবরোধ পুনরায় আরোপ করার বিষয়ে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।
সমালোচকরা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে খুবই ধীরগতিতে ও গা বাঁচিয়ে তৎপরতা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করে আসছেন।
এর মধ্যেই সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলে, আমরা গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কাই অনুযায়ী অবরোধ আরোপসহ মার্কিন আইন অনুযায়ী মিয়ানমারের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করার পন্থা নির্ধারণ করছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যে মোতায়েনকৃত মিয়ানমারের সেনা ইউনিটের সদস্য ও কর্মকর্তাদের মার্কিন সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি বন্ধ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আমরা মার্কিন সহায়তাপুষ্ট অনুষ্ঠানাদিতে মিয়ানমারের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করেছি। রাখাইনের সহিংসতা সংশ্লিষ্ট জায়গায় জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর অবাধ প্রবেশাধিকারের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।
পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, মিয়ানমারের কাছ থেকে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ অন্যান্য উপযুক্ত সংস্থা মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১২ সালে ম্যাগনিটস্কাই আইন পাস হয়। এ আইন অনুযায়ী ২০০৯ সালে ৩৭ বছর বয়সী সার্গেই ম্যাগনিটস্কাইয়ের কারাগারে মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত রুশ কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করা হয়। পরবর্তী সময় এটিকে বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা এখন মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে।