দেশে তেজপাতা সংগ্রহের মৌসুম চলছে। তার ব্যতিক্রম হয়নি দিনাজপুরেও। গাছ থেকে তেজপাতা সংগ্রহ করে তা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃষ্টিতে পাতার ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে তেজপাতা সংগ্রহ করা হয়। তবে এ তেজপাতা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাজার বসে না। যাদের গাছ রয়েছে তেজপাতা বিক্রি করার জন্য তাদের বাজারেও যেতে হয় না। গাছ খুঁজে বাড়ি থেকেই তেজপাতা কিনে নিয়ে যান মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে কেটে নিয়ে আসা ডাল থেকে তেজপাতা ছুটানোর পর রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। ডালগুলো আবার জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
রংপুরের কাউনিয়া থেকে আসা কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী তেজপাতা কেনার জন্য গোর-এ শহীদ ময়দানে অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে কথা হয় আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমান নামের দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে তেজপাতা সংগ্রহের জন্য এসেছেন আব্দুর রহিম। তার সঙ্গে আরও তিনজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহর ও গ্রামে ঘুরে তেজপাতা গাছের সন্ধান করেন। যেসব বাসায় গাছ দেখতে পান সেখান থেকে পাতা কিনে নেন। পরে পাতা কেটে ভ্যানযোগে মাঠে নিয়ে যান। সেখানে পাতা ডাল থেকে ছাড়িয়ে রোদে শুকাতে দেন। পরে বস্তায় ভরে ঢাকা ও চট্টগ্রামেসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান।
আব্দুর রহিম বলেন, ‘তেজপাতা শুকাতে রোদের যে তেজ লাগে বর্তমানে তা নেই। তাই পাতা প্রস্তুত করতে সময় লাগছে।
ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ ছয় মাস তেজপাতা সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। কারণ পানিতে ভিজলে তেজপাতার ঘ্রাণ বা তেজ কমে যায়। আর এ ছয় মাস বৃষ্টি কম হয়।
তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ তেজপাতার চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ গাছ নেই। তাই পরিমাণমতো তেজপাতা পাওয়া যায় না। অথচ তেজপাতা গাছের পরিচর্যা করতে হয় না বললেই চলে।
শহরের ঘাসিপাড়া মহল্লার রহমতুল্লাহ ছুটু বলেন, তাদের বাড়িতে একটি তেজপাতার গাছ রয়েছে। প্রতিবছর দুইবার পাতা বিক্রি করেন—একবার অক্টোবর, আরেকবার মার্চে। এবার ব্যবসায়ীরা আগাম চলে আসায় ফেব্রুয়ারিতেই পাতা বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তেজপাতা ব্যবসায়ীদের খুঁজতে হয় না। তারাই তেজপাতার গাছ কোন বাড়িতে আছে খুঁজে নেন। কারণ তেজপাতার বাণিজ্যিক চাষ নেই বললেই চলে। শখের বশে তেজপাতার গাছ লাগানো হয়।
তাদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩০ জনের মতো তেজপাতা সংগ্রহের কাজ করছেন বলে জানান এ দুই ব্যবসায়ী।