সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে সংসারের বোঝা মনে করে ফাতেমা খাতুন (৮৫) নামে বৃদ্ধ মাকে হত্যার দায়ে ছেলে ও ছেলে বউকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১টার দিকে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক কানিজ ফাতিমা এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয় আসামিরা দি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় দণ্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কাজিপুর উপজেলার রেহাইশুরিবের গ্রামের মৃত মকছেদ আলী মণ্ডলের ছেলে মো. আব্দুস সামাদ (৬৫) ও আব্দুস সামাদের স্ত্রী মোছা. রশিদা খাতুন (৬০)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ওই আদালতের পেশকার আব্দুল মমিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শামছুল আলম জানান, ২০১৬ সালের নিহত রশিদা খাতুন একজন উগ্র মেজাজের মহিলা। তার স্বামী আব্দুস সামাদ স্ত্রীর কথামতো চলতেন। শ্বাশুড়ির সঙ্গে রশিদার প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকতো। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর ভিকটিম শাশুড়ি ফাতেমা তাকে নদীতে গোসল করানোর জন্য নিয়ে যেতে ছেলের বউ রশিদাকে বলেন। এতেই রশিদা ক্ষিপ্ত হন। এ সময় দুজনের ঝগড়া হয়। পরে বাড়িতে থাকা রশিদার ছেলের বউ রুনা খাতুন ঝগড়া থামিয়ে দেন। ওইদিন সন্ধ্যার খাবার শেষে বৃদ্ধ ফাতেমা নাতি বউ রুনা খাতুনের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। আলাদা রুমে ঘুমান সামাদ ও রশিদা। রাতে রশিদা, স্বামী আব্দুস সামাদের সঙ্গে পরামর্শ করে যে বৃদ্ধা শাশুড়ি সংসারের বোঝা, কোনো কাজ করে না শুধু ঝগড়া করেন। এ সময় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রশিদা ও তার স্বামী সামাদ।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক গভীর রাত সাড়ে ৩টার দিকে রশিদার পরামর্শে সামাদ তার মা ফাতেমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পাশের একটি ঘরে নিয়ে জোর করে শোয়াইয়া ফেলে। পরে মুখে পড়নের কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে সামাদ পা ধরে রাখেন এবং রশিদা বটি দা দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। নিহতের গোঙানির শব্দে তার নাতিবউ রুনা খাতুন জেগে উঠে তার গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান। তখন রশিদা ও সামাদ তাকে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. আব্দুর রহিম বাদী হয়ে প্রথমে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে নিহতের ছেলে ও ছেলে বউ গলাকেটে তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ এই রায় দেন।