তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবন প্রণালীকে সহজ করে দিয়েছে। অনেক কিছু করেছে সহজলভ্য।
তেমনইভাবে প্রযুক্তির কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে।
সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা, হ্যাকিং, ক্লোনিংসহ নতুন নতুন অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটছে। অনেকে হয়রানি বা প্রতারণার মুখোমুখি হতে হচ্ছেন। নারীরাও শিকার হচ্ছেন সাইবার বুলিংয়ের। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সম্মানহানিসহ আর্থিক প্রতারণার শিকারও হচ্ছেন অনেকে।
এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অনেকে করণীয় বুঝতে পারেন না। তাই অনলাইন বা সাইবার জগতে এ ধরনের অপরাধের শিকার হলে কীভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা। এক্ষেত্রে দুভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
প্রথমত-থানা তথা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের।
দ্বিতীয়ত-আদালতে অভিযোগ বা মামলা দায়ের।
প্রথমত, অনলাইনে হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলে প্রথমে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে পারেন। পুলিশ অপরাধের ধরন বিবেচনায় নিয়ে সরাসরি অভিযোগটি আমলে নিয়ে অপরাধীকে গ্রেপ্তার এবং অপরাধের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ৪২ ধারায় পুলিশকে এ ধরনের গ্রেপ্তার বা আলামত, সরঞ্জাম বা দলিলাদি জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রাথমিক তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিতে পারে। প্রাথমিক তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগটি আমলে নিতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রদত্ত তথ্য মতে, ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, ফেক আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও শেয়ার, উগ্রধর্মীয়-সন্ত্রাসবাদী কনটেন্ট শেয়ার, অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে তার বিকৃত তথ্য ও ছবি ব্যবহার, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, অনলাইনে প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি অপরাধের জন্য তারা ই-মেইল বা নিজস্ব অ্যাপেও অভিযোগ নিয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, মামলা দায়ের যদি পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে অনলাইনে অপরাধের প্রতিকার না পাওয়া যায়, তবে সরাসরি আদালতে এসেও মামলা দায়ের করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে সংশ্লিষ্ট জেলা যেই বিভাগের অধীন, সেই বিভাগের জন্য নির্ধারিত সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর তা আমলে গ্রহণের মতো উপাদান থাকলে মামলা হিসেবে তদন্তের আদেশ দেবেন। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে এই আইনের ৪৭ ধারার বিধান মোতাবেক অপরাধ বিচারার্থে আমলে গ্রহণ (cognizance) করবেন।
তবে মনে রাখতে হবে কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হলে সেটিও সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৩৪ ধারার বিধান মোতাবেক যে অপরাধে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হবে মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হলে সেই অপরাধটি সমপরিমাণ শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।