• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন

মুক্তিপণের জন্য মাকেও অপহরণ করে কামাল

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪

মোস্তফা কামাল উজ্জ্বল, গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিমরাইল এলাকায়। একেক সময় একেক পেশা তার। কখনও রাজমিস্ত্রি, অলনাইনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী, আবার কিছুদিন করেছে ফিডের কারবার। ছিল সৌদি আরবেও। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেছে সে। তবে নিজের দৃশ্যমান ব্যবসার আড়ালে একজন পেশাদার অপরাধী।

এর আগে কামাল তার মাকেও অপহরণ করে দুই সপ্তাহ আটকে রাখে। এ ঘটনায় অপহরণের নাটক করে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সে টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ পল্লবীর ৭ নম্বর সেকশন থেকে ইয়াছিন আরাফাত নামে ৯ বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে মোস্তফা। এর পর শিশুটির পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। সন্তানের প্রাণ রক্ষায় রিকশাচালক নিজাম উদ্দিন ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফেরত পাননি। পরে এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করেন এই বাবা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে অনুসরণ করছে– এটা টের পেয়ে ঘটনার ১০ দিন পর বিমানবন্দর এলাকায় শিশুকে ফেলে পালিয়ে যায় এ অপহরণকারী। এর আগেও শিশু অপহরণসহ নানা ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জড়ায় সে।

শিশুটির পরিবার ও পুলিশ জানায়, পল্লবীতে নিজাম উদ্দিনের বাসায় সাবলেট হিসেবে থাকত মোস্তফার পরিবার। এই সূত্র ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। গত ১৮ নভেম্বর কৌশলে আরাফাতকে অপহরণ করে মোস্তফা। এর পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সিম নম্বর থেকে মুক্তিপণের দাবিতে ফোন করতে থাকে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই তথ্য জানালে শিশুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

ডিবির মিরপুর বিভাগের এডিসি রাশেদ হাসান জানান, শিশু অপহরণের ঘটনাটি জানার পরপরই শুরু হয় ছায়া তদন্ত। এতে দেখা যায়, চতুর ৩১ বছর বয়সী মোস্তফা প্রযুক্তিতে অত্যন্ত পারদর্শী। কোনোভাবে তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল।

গ্রেপ্তার এড়াতে অহরণের শিকার শিশু এবং স্ত্রী প্রমি আক্তারকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাতেও ঘুমাত সে। একেক রাতে একেক ফুটপাতে থাকত। আগে থেকে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় নানা কৌশলে আরাফাতকে তার হেফাজতে রাখতে সক্ষম হয়। সে কোনো ধরনের কান্নাকাটিও করত না। তবে মুক্তিপণের কিছু অর্থ হাতে পাওয়া এবং পুলিশের ভয়ে অপহরণের ১০ দিন পর শিশুকে বিমানবন্দর এলাকায় ফেলে ঢাকার বাইরে আত্মগোপনে চলে যায়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, অপরাধে মোস্তফার হাতেখড়ি অন্তত এক দশক আগে। একসময় সে হুন্ডি কারবারও করত। কামাল এতটাই পাষাণ, বছর দুয়েক আগে এক আত্মীয়ের সন্তানকেও কুমিল্লা থেকে অপহরণ করে। ওই ঘটনায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ পাওয়ার পর শিশুটি প্রাণে রক্ষা পায়। এই ঘটনায় কুমিল্লায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, মোস্তফা ২০২২ সালে নানা ধরনের অপরাধে জড়ায়। তিনটি কোরআন শরিফ কিনে তার পাতা ছিঁড়ে বিমানবন্দর এলাকার কাওলায় ফেলে রেখেছিল। এর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। এই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে বেরিয়ে আবার নানা অপকর্মে জড়ায় সে।

ডিবির মিরপুর বিভাগের ডিসি মানস কুমার পোদ্দার জানান, মোস্তফা একজন পেশাদার অপরাধী। পল্লবী থেকে অপহরণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করা গেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘদিন নানা কৌশলে অনুসরণের পর বুধবার ভোরে মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তার হেফাজত থেকে ৩০টি সিম কার্ড ও আটটি মোবাইল সেট পাওয়া গেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ জানায়, বিভিন্ন অনলাইনে চোরাই মোবাইল ফোনসেট নিয়মিত বিক্রি করে আসছে মোস্তফা। নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এসব সেট সে অন্যের কাছে হস্তান্তর করে। এমনকি মোবাইল ফোনের আইএমইআই বদলাতে পারে কামাল। অপরাধ কর্মকাণ্ডে মোস্তফাকে সহযোগিতা করত তার স্ত্রী। নানা ধরনের অপরাধ করেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করত। একেক জায়গায় দু-তিন মাসের বেশি থাকত না। পোশাককর্মীদের কাছ থেকে কৌশলে এনআইডি নিয়ে তা দিয়ে সিম কার্ড তুলেছে সে।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা পুলিশকে জানায়, ব্যবসায় ধরা খাওয়ার পর অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ বলছে, নিজেকে বাঁচাতে এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে সে। মোস্তফা পরিকল্পনা করেই নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ