• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

নানাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ১১ বছর সরকারি চাকরি করার অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সরকারি চাকরি করছেন কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম আকন্দ। তিনি নিজ নানাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পোষ্য কোটার জাল সনদ দাখিল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা কৃষি অফিসে দ্বিতীয় শ্রেণি পদ মর্যাদার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

আবুল কাশেম আকন্দ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার জগদীশ গ্রামের মৃত নিজামুদ্দিন আকন্দের ছেলে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের সত্যতা যাচাই করতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন বগুড়ার আটমুল উপজেলার পইয়াগাড়ী গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক, দুদক ও জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে এ অভিযোগ দায়ের করেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, সম্পূর্ণ জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় চাকরি নিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন আবুল কাশেম।

তিনি নিজের মাতা সাহার বানুকে শিবগঞ্জের আটমুল কুঞ্ছিথল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নবিরউদ্দিন আকন্দের কন্যা এবং নিজেকে নাতি বানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাক্ষর জাল করে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় অবৈধপন্থায় চাকরি নেন।

মুক্তিযোদ্ধা বংশের কেউ না হয়েও পোষ্য কোটার জাল সনদ তৈরি করে আবুল কাশেম সর্বপ্রথম ২০১৩ সালের ১২ আগস্টে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলায় যোগদান করেন এবং সেখান থেকেই সর্বপ্রথম সরকারি বেতনভাতা নেওয়া শুরু করেন। বর্তমানে তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত আছেন।

এবিষয়ে অভিযোগকারী কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসে আবুল কাশেমের প্রকৃত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলেও আবুল কাশেম উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তথ্য গোপন রেখেছেন বলে জানা যায়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিনামা-১৬৬৬-০১১০০০০৫১৩৫ নম্বর গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিন আকন্দের সঙ্গে অভিযুক্ত আবুল কাশেমের নানার নামের কোনো মিল নেই৷ মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিনের ওয়ারিশ হিসাবে স্ত্রী আছিমন বিবি, এক মেয়ে আনেছা বিবি ও এক ছেলে আনিছুর রহমান রয়েছে। অথচ অভিযুক্ত আবুল কাশেমের আসল নানার নাম নজরুল ইসলাম।নানার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য ৯ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন এক স্ত্রী রাবেয়া ও পাঁচ মেয়ে- সাহার বানু, আফিয়া, নার্গিস, মোরশেদা, নাদিরা এবং তিন ছেলে- মো. আতাউল হক, মো. আলম মিয়া ও মো. আজম আলি রয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিনের বংশের সঙ্গে আবুল কাশেমের নানার বংশে কোনো যোগসূত্র নেই।

তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিনের নাম ও ঠিকানা জালিয়াতি করে নিজ নানা নজরুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে জাল সনদ তৈরি করে সরকারি চাকরি হাতিয়ে নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিন ও তার পরিবার।

জাল সনদ ব্যবহার করে সরকারি চাকরি নেওয়া আবুল কাসেম সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিন আকন্দ জানান, সাহার বানু না তাঁর ঔরসজাত মেয়ে এবং না আবুল কাশেম তাঁর নাতি। সনদ জালিয়াতি করে আবুল কাশেম ঘোরতর অপরাধ করেছে এবং তার মান ক্ষুণ্ন করেছে। রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ করার অপরাধে তার বিচার দাবি করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে আটমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, আবুল কাশেম কীভাবে ওয়ারিশ সনদ নিয়েছে তা আমার জানা নেই। আমার সই করা এখনকার দুটি ওয়ারিশ সনদের তথ্য সঠিক। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আবুল কাশেম মুক্তিযোদ্ধা নবীরউদ্দিনের বংশের কেউ না।

মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পোষ্য কোটায় চাকরি পেলেন জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, চাকরির সময় আমার সঠিক সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। পুলিশ ভেরিফিকেশন কিভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথানিয়মে ভেরিফিকেশন করে নিয়েছি। তবে তাঁর নানার বংশে মুক্তিযোদ্ধা থাকার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. রাহেলা পারভীন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। জেলা প্রশাসক যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ