চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাতে আসলে গোটা ইউরোপের ফুটবলাঙ্গনেই একটা উৎসব উৎসব ভাব কাজ করে। প্রিয় দলের জয়ে যে উৎসব পায় পূর্ণতা। প্যারিস সেন্ট জার্মেই ও বায়ার্ন মিউনিখের জন্য পরশুর রাতটা ছিল তেমনি। ২ ম্যাচ হাতে রেখে সবার আগে আসরের নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা।
আবার কখনো অনাকাক্সিক্ষত পরাজয়ে উৎসব রুপ নেয় হতাশায়। লন্ডনবাসীদের অভিজ্ঞতা ছিল এমনি। তাদের প্রিয় দল চেলসি রোমার কাছে ডুবেছে ৩-০ গোলের লজ্জায়। চেলসি দর্শকদের কিছু বুঝে উঠার আগেই হতাশা উপহার দেন স্টেফেন এল সারাউই। ম্যাচর বয়স তখন মাত্র ৩৮ সেকেন্ড। পরে আরো এক গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখেন স্টেফেন। তাতে অবশ্য বøুদের পরের রাউন্ডের আশা শেষ হয়ে যায়নি। ‘সি’ গ্রæপে ৪ ম্যাচে ২ জয় এবং একটি করে ড্র ও হারে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রোমা। তিন ড্র ও এক হারে মাত্র ৩ পয়ন্ট নিয়ে তিনে অ্যাটলেটিকো। নিজেদের মাঠে কারাবাগের সাথে এদিনও ১-১ ড্র করে ডিয়েগো সিমিওনের দল।
তাহলে ম্যাচচেস্টার ইউনাইটেডের জয়কে কি বলা যায়? টানা চার ম্যাচ জিতেও যে এখনো শেষ ষোল নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। কোচ হোসে মোরিনহো তাই মজা করেই বললেন, ‘এখনো আমরা কোয়ালিফাইড হয়নি? চার জয়ও যথেষ্ঠ নয়? বাকি দুই ম্যাচ থেকে আমাদের এক পয়েন্ট নিতেই হবে।’
বায়ার্ন যেখানে ৯ পয়েন্ট নিয়েই পরের পর্ব নিশ্চিত করেছে সেখানে পুরো ১২ পয়েন্ট নিয়েও এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি তার দল ম্যান ইউ। ‘এ’ গ্রæপে অপর দুই দল এফসি বাসেল ও সিএসকেএ মস্কোর পয়েন্ট সমান ৬ করে। যে কারনে অপেক্ষা বেড়েছে রেড ডেভিলদের।
বেনফিকার বিপক্ষে তাদের জয়টাও ছিল পাগলাটে। মাতিকের দুরপাল্লার শট ঝাপিয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলেন বেনফিকা গোলরক্ষ মাইল সিলভা, ডাইভও দিয়েছিলেন। কিন্তু বল নাগালের বাইরে দিয়ে গিয়ে বারে লেগে ফিরে আসার সময় সিলভার পিঠে লেগে আবার তা জালে জড়ায়! এর আগে অ্যান্থনি মার্শিয়ালের পেনাল্টি রুখে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বকনিষ্ঠ গোলকিপার হিসেবে পেনাল্টি সেভের রেকর্ড গড়েন সিলভা। পরে অবশ্য বিøন্ডের পেনাল্টি গোলেই ব্যবধান বাড়ায় মরিনহোর দল।
ম্যান ইউ’র মত অপেক্ষা বেড়েছে বার্সেলোনারও। অলিম্পিয়াকোসের মাঠে আক্রমণের বান বইয়েও প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পাননি মেসি-সুয়ারেজরা। কি অদ্ভুত অভিজ্ঞতাই না নিতে হয়েছে বার্সা ভক্তদের। মেসি-সুয়ারেজদের সামনে যেন চীনের প্রাচীর দাঁড় করিয়েছিল কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের সাবেক ক্লাব অলিম্পিয়াকোস। সফরকারীদের মুহুর্মুহু আক্রমণেও যে দেয়াল থেকে গেছে অক্ষত। ৭০ শতাংশ বলের দখল, ১৯ বার প্রতিপক্ষের গোলমুখে আক্রমণ, ৬ বার গোলে শট, ৬৭৪ টি পাস আদান প্রদানের সব পরিসংখ্যানগুলো তাই কোন কাজেই আসেনি। দাঁতে দাঁত চেপে মেসিদের আক্রমণ ঠেকিয়ে গেছে গ্রীসের দলটি। এমন একপেশে গোলহীন আক্রমণে মাঠের দর্শকরাও বিরক্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে শুরু করেন।
ম্যাচ শেষে কাতালান মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটস বলেন, ‘আমরা সব ধরণের চেষ্টাই করেছিলাম, ভালো সুযোগ তৈরী করেছিলাম, বারে আঘাত লেগে বল ফিরেও এসেছে। মাঝে মাঝে বল ভেতরে যেতে চায় না।’ তবে দলের পারফর্ম্যান্সে খুশি স্প্যানিশ তারকা বলেন, ‘আমরা এভাবেই চালিয়ে যেতে চাই। আমরা ভালো অবস্থানে আছি। এভাবে খেললে ১০০ ম্যাচের মধ্যে ৯৫ বারই জয় পাওয়া সম্ভব।’ কোচ ভালভার্দেও বললেন, ‘আমাদের কেবল একটি গোলের অভাব ছিল।’
গ্রæপ পর্বে ৫ বছর পর গোলশূন্য ড্র করল বার্সা, গত ৪৮ বছরে দ্বিতীয়বার। সেই সুবাদে পাওয়া একমাত্র পয়েন্টে কাগজে-কলমে শেষ ষোলর আশা বাঁচিয়ে রেখেছে অলিম্পিয়াকোস। ১০ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রæপের শীর্ষে বার্সা। ৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকা জুভেন্টাস এদিন লিসবনে গঞ্জালো হিগুয়েইনের গোলে হার এড়ায়।
প্যারিসে আন্ডারলেখটের জালে যে এদিন গোলউৎসব হবে এর আভাস প্রথম লেগেই দিয়ে রেখেছিল পিএসজি। বেলজিয়ান প্রতিপক্ষকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়াটা তাই অনুমিতই ছিল। প্রথমার্ধে ভেরাত্তি ও নেইমারের গোলে এগিয়ে থাকা দলের হয়ে দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করেন লেফট ব্যাক লেইভিন কুরজাওয়া। চার ম্যাচে শতভাগ জয় ও ১৭ গোল করার বিপরীতে একটি গোলও হজম না করে শেষ ষোলই পা রাখল উনাই এমিরির দল।
একই গ্রæপ ‘বি’ থেকে স্কটিশ চ্যাম্পিয়ন সেল্টিককে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে বায়ার্ন। বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয় দের হয়ে এদিন গোল করেন কোম্যান ও জাবি মার্টিনেজ।
আজ মুখোমুখি
ম্যান ইউ ২ : ০ বেনফিকা
বাসেল ১ : ২ সিএসকেএ মস্কো
সেল্টিক ১ : ২ বায়ার্ন
পিএসজি ৫ : ০ আন্ডারলেখট
রোমা ৩ : ০ চেলসি
অ্যাটলেটিকো ১ : ১ কারাবাগ
অলিম্পিয়াকোস ০ : ০ বার্সেলোনা
স্পোর্টিং সিপি ১ : ১ জুভেন্টাস