রাজশাহী জেলার ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী বুধবার থেকে গুটি আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়েছে
রাজশাহী জেলার ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী বুধবার থেকে গুটি আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন বাগানে আম পাড়া শুরু হয়। এবার ৫০ টাকা কেজি দরে এই বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতারা অপেক্ষায় রয়েছেন, গোপালভোগ-হিমসাগর জাতের আমের জন্য।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামাতে পারবেন চাষিরা। গত বছর আম পাড়া শুরুর সময় ছিল ৪ মে। তার আগেরবার ছিল ১৩ মে থেকে। আবহাওয়ার কারণে এবার সময় পিছিয়েছে। তবে আমচাষিরা বলছেন, এবার আম বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এবার গোপালভোগ বা রানিপসন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী নগরীর শাল বাগান এলাকার ফল বিক্রেতা মোশরারফ হোসেন বলেন, ‘আজ থেকে আম পাড়া কেবল শুরু হয়েছে। গুটি জাতের এই আম সেভাবে কেউ খেতে চায় না। তাই বাজারে এখনও আসেনি। গোপালভোগ-হিমসাগর আসলে চাহিদা বাড়বে। তখন থেকে দাম নির্ধারণ করা হবে।’
রাজশাহী নগরীর জিন্নাহ নগর এলাকায় সাত বিঘার আমবাগান আছে রাজ চাঁপাই অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সংগঠনের সভাপতি আনোয়ারুল হকের। আজ তার বাগান থেকে আম পেড়েছেন। বাগান থেকেই বিক্রি করেছেন। ৪০ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করেছি জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, ‘আমার বাগানের আম পরিপক্ব হয়েছে। দু-একদিন রাখলেই পেকে যাবে। ধীরে ধীরে আম আরও পাড়বো। আজ কিছু গাছ থেকে পেড়েছি। তবে গোপালভোগ ও হিমাসাগর আসলে বাজার জমে উঠবে।
চারঘাট উপজেলার আম চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর গুটি আম ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। এবার বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।
তবে বাঘার আম চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাগানের আম ভাঙতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আচার তৈরির জন্য গত কয়েকদিন ধরে আম পাড়ছি। সেগুলো নারায়ণগঞ্জে চলে যাচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাবিনা বেগম বলেন, ‘গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন হবে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের আগে যদি কোনও চাষি আম পাড়েন তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি মনিটরিং করতে হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমির আম গাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। তবে ঝড়ের কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলায় এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবারও একই ছিল লক্ষ্যমাত্রা।