এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর আগেই ‘হট ফেবারিট’ ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। আর হিসেবের কাগজ-কলম বলছিল, সবচেয়ে দুর্বল দলগুলোর একটা সিলেট সিক্সার্স।
ক্রিকেটের এসব কাগজ-কলমের হিসেব যে মাঠে কোনো মূল্য পায় না, সেটা আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেলো। পঞ্চম বিপিএলের শুরুই হলো বিশাল এক অঘটন দিয়ে। সেই দারুণ ফেবারিট ঢাকাকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দিল স্বাগতিক সিলেট। আগে ব্যাট করা ঢাকা অপ্রত্যাশিতভাবে ধসে পড়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ১৩৬ রান তুলতে পেরেছিল। জবাবে সিলেট বিনা উইকেটেই ১২৫ রান। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ১৬.৫ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
ঢাকার পতন শুরু হয়েছিল ম্যাচের প্রথম ওভারেই। বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব করা নাসির হোসেন নিজেই এসেছিলেন প্রথম ওভার বল করতে। তাকে তুলে মারতে গিয়ে বিনা রানে ফেরত আসেন ঢাকার গত আসরের অন্যতম নায়ক মেহেদী মারুফ। এরপর ঢাকা একটা ভালো জুটি পেয়েছিল। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রান যোগ করেন কুমার সাঙ্গাকারা ও এভিন লুইস। কিন্তু এই জুটি শুরুটা ভালো করলেও একটা পর্যায়ে ডট বলের কাছে পিছিয়ে পড়তে থাকেন। লুইস ২৪ বলে ২৬ রান করে নাসিরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন। আর ২৮ বলে ৩২ রান করা সাঙ্গাকারাকে ফেরান লিয়াম প্লাঙ্কেট। আর এখান থেকেই ধসের শুরু। ২০ রানের ব্যবধানে ঢাকা ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৬ রান করে রানআউট হন। কাইরন পোলার্ডও নিচের দিকে এসে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তিনি ১১ রান করে আবুল হাসানের প্রথম শিকারে পরিণত হন।
সাকিব আল হাসান ও ক্যামেরন দেলপোর্ত এই পর্যায়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাকিব ২৩ রান করে ক্যাচ তুলে দেন সাব্বিরের হাতে; সেটা ছিল প্লাঙ্কেটের দ্বিতীয় উইকেট। দেলপোর্ত এক প্রান্তে ২০ রান করে অপরাজিত থাকলেও শেষ দিকের সঙ্গীদের সমর্থনের অভাবে রানটা আর বড় করতে পারেননি।
সিলেটের ইনিংসের চিত্র ছিল এর একেবারেই বিপরীত। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাকিব আল হাসানকে চার মেরে শুরু করেন ফ্লেচার। এরপর কার্যত কোনো বোলারদের স্থির হতে দেননি ফ্লেচার ও থারাঙ্গা। একের পর এক বাউন্ডারিতে মুহূর্তেই খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ শহীদকে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে শুরু করেন থারাঙ্গা।
মাত্র ৩৮ বলে ফিফটি পূরণ করে ফেলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। আর ৩৪ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন উপল থারাঙ্গা। একটা সময় মনে হচ্ছিল, এরা দু’জনই অপরাজিত থেকে খেলা শেষ করে আসবেন। সেই সময়ে এই জুটি ভাঙেন আদিল রশীদ। ইংলিশ এই বোলারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লুইসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৫১ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো ৬৩ রান করা ফ্লেচার। তবে থারাঙ্গা ম্যাচ শেষ করেই ফিরেছেন। ৪৮ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ৬৯ রান করে অপরাজিত থাকেন লঙ্কান এই তারকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৩৬/৭ (মারুফ ০, লুইস ২৬, সাঙ্গাকারা ৩২, মোসাদ্দেক ৬, সাকিব ২৩, পোলার্ড ১১, দেলপোর্ত ২০*, রশীদ ৩, আবু হায়দার ৭*; নাসির ২/২১, আবুল হাসান ২/২৪, প্লাঙ্কেট ২/২০)।
সিলেট সিক্সার্স: ১৬.৫ ওভারে ১৩৭/১ (থারাঙ্গা ৬৯, ফ্লেচার ৬৩, সাব্বির; রশীদ ১/৩১)
ফল: সিলেট সিক্সার্স ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: উপল থারাঙ্গা
যাকিছু প্রথম
প্রথম বল: নাসির হোসেন
প্রথম রান: এভিন লুইস
প্রথম উইকেট: নাসির হোসেন (শিকার-মেহেদী মারুফ)
প্রথম চার: এভিন লুইস
প্রথম ছক্কা: কুমার সাঙ্গাকারা
প্রথম ফিফটি: আন্দ্রে ফ্লেচার
প্রথম জয়: সিলেট সিক্সার্স