আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম মহড়া হিসেবে দেখছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কারণ ভোটাররা এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অন্যতম ছয়টি বড় নগরে প্রধান দুই প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ বছরের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে পর্যায়ক্রমে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হতে পারে। একমাত্র রংপুরের বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের। বাকি পাঁচ সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপির। অবশ্য মামলা ও বহিষ্কারের কারণে বিএনপি দলীয় মেয়রদের পাঁচ বছর মেয়াদের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে কারাগার আর আদালতে ঘোরাঘুরি করে।
জানা গেছে, ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে প্রধান দুই দল। দু’পক্ষই এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। রংপুরের পাশাপাশি বাকি পাঁচটি সিটিতেও এবার জয় পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে সারাদেশের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে দফায়-দফায় জরিপ চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান, কর্মীসভাসহ নানা নামে কর্মসূচি পালন করছেন কেন্দ ীয় নেতারা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১ নভেম্বর রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এতে সিটি নির্বাচন নিয়েও তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আগামীকাল বুধবার অনুরূপ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে রংপুরে। এরপর ১১ নভেম্বর গাজীপুর ও ২৫ নভেম্বর খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সব স্থানেই ওবায়দুল কাদেরের যাওয়ার কথা রয়েছে। সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনের পাশাপাশি সিটি নির্বাচন উপলক্ষে তিনি স্থানীয় নেতাদের দিকনির্দেশনাও দেবেন বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।অন্যদিকে, বসে নেই বিএনপিও। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরে রোহিঙ্গাদের দেখতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া যাওয়ার পথে ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত। এর প্রভাব সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পড়বে। খালেদা জিয়া শিগগিরই বিভাগীয় শহরগুলোতেও যাবেন। এর মাধ্যমে সারাদেশে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা নতুন করে জেগে উঠবেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আমরা হাল্কাভাবে নিচ্ছি না, এ ব্যাপারে কেন্দ ীয়ভাবে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এগুলোতে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। যার কারণে প্রতীকের মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও এখানে জড়িত।’ জানা গেছে, রংপুর ছাড়া বাকি পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে তফসিল ঘোষণার পর সার্বিক বিবেচনায় হয়তো কোথাও কোথাও পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। অন্যদিকে, রংপুরে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন বর্তমানে মাঠে সক্রিয়। এখানকার বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ। জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ইতোমধ্যে রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন।
সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং রাজশাহীতে খায়রুজ্জামানকে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহী উদ্দিন সেলিমও প্রার্থী হতে আগ্রহী। রাজশাহীতে খায়রুজ্জামানের বাইরে প্রকাশ্যে অবশ্য প্রার্থী নেই। বরিশালের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাই খোকন সেরনিয়াবাত ও ছেলে সাদেক আবদুল্লাহর নাম কেন্দ্রীয়ভাবে শোনা যাচ্ছে। খুলনায় আওয়ামী লীগের এমপি শেখ হেলালের ভাই শেখ জুয়েলের নাম আলোচনায় আছে। এছাড়া খুলনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আনিসুর রহমানেরও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ রয়েছে। গত নির্বাচনে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি এখন মোংলা-রামপাল আসনের এমপি। মেয়র নির্বাচনে এবার তার আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে দু’জন, তারা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালে আজমত উল্লাহ বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে ছিলেন। দল আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিয়ে জাহাঙ্গীরকে নাটকীয়ভাবে বসিয়ে দেয়।
উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলই দলের স্থানীয় কোন্দল-বিবাদ মেটানোরও উদ্যোগ নিয়েছে। সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যেন দলের ঐক্য নষ্ট হতে না পারে-সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।