দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এক সময় প্রচুর কাউন চাষ হতো। আবার এক সময় গরিবের প্রধান খাদ্যও ছিল এ কাউন। দিনের পর দিন মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এখন আর সেভাবে এসব অঞ্চলে কাউন চাষ হয় না। কালের আবর্তে কাউন চাষ হারিয়ে গেলেও এবার তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উঁচু জমিতে বাদামের সঙ্গে কাউন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারিপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. রেজানুর ইসলাম রেজা।
ইউটিউব ও বিভিন্ন জার্নালের কলাম পড়ে স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এই ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন তিনি।
প্রথমবারের মতো তিনি সাড়ে ৩ একর উঁচু জমিতে বাদাম চাষ করছেন। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় একর জমিতে বাদামের সঙ্গে কাউন চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন।
রেজানুর ইসলাম রেজার কাউন দেখতে আসা প্রদীপ রায় বলেন, এই ফলের নাম এলাকার দাদুর কাছে অনেক শুনেছি। কিন্তু সরাসরি দেখিনি। আজ স্বচক্ষে দেখলাম। কাউন দেখে অনেক ভালো লাগল।
প্রতিবেশী আকবর বলেন, আমি এই গ্রামের একজন কৃষক। আমি রেজার বাদামের সঙ্গে কাউনের চাষ দেখতে আসলাম। দেখে আমি উৎসাহিত হলাম। রেজার এই উদ্যোগ দেখে আমিও আগামী বছর কাউন চাষ করব।
তরুণ উদ্যোক্তা মো. রেজানুর ইসলাম রেজা বলেন, আমি প্রথমবারের মতো সাড়ে ৩ একর উঁচু জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। এরমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় একর জমিতে বাদামের সঙ্গে কাউন চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছি।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার কৃষিকে খাতকে স্মার্ট কৃষি হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সরকারের এই উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউব ও বিভিন্ন জার্নালের কলাম পড়ে বাদামের সঙ্গে কাউন চাষ শুরু করি। কৃষিতে পূর্ব ধারণা না থাকায় বিষয়টি আমার জন্য কঠিন ছিল। বাদাম এবং কাউন একসঙ্গে চাষ করা তেমন সহজ ছিল না। এলাকার কৃষকরা তেমন একটা উৎসাহ জোগায়নি। তবে আমি কিন্তু নিরাশ হইনি এবং থেমেও যাইনি। বাদামের সঙ্গে কাউন চাষে তেমন একটা খরচ নাই। সেচ অনেক কম লাগে এবং অনাবৃষ্টিতেও সমস্যা নাই। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ একর জমিতে বাদাম চাষে সব মিলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার হিসাবে প্রায় ৪ লাখ হতে ৫ লাখ টাকা আয় হতে পারে বলে আশা করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাদামে সঙ্গে কাউন চাষে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। এটি চাষাবাদে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তবে এই তরুণ উদ্যোক্তার এই উদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখেছে। তার সফলতা আমাদের কৃষকদের উৎসাহিত করবে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।