• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বলিউড তারকা কারিনাকে ‘বয়স্ক’ বলে বিপাকে পাকিস্তানি অভিনেতা ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে: মির্জা ফখরুল শিক্ষার্থীদের পিকনিক বাসের ধাক্কায় মিনিবাসের দুই যাত্রী নিহত কীভাবে ঢুকল আরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গা যে ব্যাখ্যা দিলো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সহ-সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী দুই দিন ধরে নিখোঁজ হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারে দুদকের অনুসন্ধান শুরু মালাক্কায় আন্তর্জাতিক হালাল ফেস্টিভাল’এ বাংলাদেশ হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন এবার যা যা নিয়ে এলো পাকিস্তানি সেই জাহাজে দিল্লির সব স্কুলে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ

প্রার্থী জট নিয়ে দুশ্চিন্তা আ’লীগে, বিভক্ত বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার জাতীয় পার্টিতে একাধিক প্রার্থী

আপডেটঃ : শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন বিএনপির ঘাঁটি হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আঘাত হানে আওয়ামী লীগ। বিএনপির অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে হারিয়ে এমপি হন আওয়ামী লীগের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। তখন থেকেই অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন সোলায়মান হক। তবে আগামী নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে।

গ্রুপিংয়ে বিএনপি অনেকটাই দুর্বল। তবে ৩ যুগ ধরে সোলায়মান হক আওয়ামী লীগকে এক সুতোয় গেঁথে রাখলেও সম্প্রতি তাতে ভাটার টান পড়েছে। গত নির্বাচনের পর আ’লীগের কোন্দল ডালপালা ছড়িয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। গত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সোলায়মান হক। এবার তাকে দলীয় মনোনয়ন পেতে পাঁচ প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হবে। এরা সবাই মাঠে সক্রিয়। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

১৯৭৩ সালে এ আসনে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার বাদল রশীদ এমপি হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির মিঞা মো. মনসুর আলী। ১৯৯১ সালে বিজয়ী হন বিএনপির মিঞা মো. মনসুর আলী। ১৯৯৬ সালে দুটি নির্বাচনেই বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোলায়মান এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর সোলায়মানকে জাতীয় সংসদের হুইপ করা হয়।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয় সোলায়মান হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে জয়লাভ করবে দল।’ গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের চেষ্টা করবেন। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগকে যেভাবে সংগঠিত করেছি, তাতে মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’ চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সামসুল আবেদীন খোকন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘দলের জন্য সারা জীবন কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি দলীয় প্রার্থী হতে চাই।’

আরেক মনোনয়ন প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও নির্বাচিত ভিপি ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাড়াও ডা. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। এছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলেও আমি তার পক্ষেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করব।’

২০১৫ সালে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত পৌর মেয়র ও চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, ‘গোটা জেলার তরুণ সমাজ আমার সঙ্গে আছে। দলের দুর্দিনে ছিলাম। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস জানান, ‘নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। মাঠ জরিপ করে মনোনয়ন দেয়া হলে আমিই হব মহাজোটের প্রার্থী।’ একই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের দফতর সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল হক পানু। তিনি বলেছেন, ‘দলের জন্য আমি নিবেদিত প্রাণ। সারা জীবন আওয়ামী লীগ করে আসছি। তাছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলায় আমার ব্যাপক পরিচিতি। যাচাই-বাছাই করলে আমিই হব আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।’ এছাড়া এফবিসিসিআই পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান বুলা ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফের নেতৃতে তিনটি বলয় গড়ে উঠেছে বিএনপিতে। এর মধ্যে অহিদুল ইসলাম নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সোলায়মান হকের সঙ্গে পরাজিত হন। এরপর থেকেই তিনি অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির প্রচার চোখে না পড়লেও মনোয়নয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা তা নিয়ে আমরা স্পষ্ট নই। সরকার যদি নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে তখন দেখা যাবে। আর বিএনপি যদি যোগ্য মনে করে আমাকে মনোনয়ন দেয় সে ক্ষেত্রে আমার আপত্তি থাকবে না।’ অন্যদের মধ্যে সাবেক এমপি সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের ভাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘আমি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হই। আমিই বেশি ভোট পেয়েছিলাম। আমাকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত দেখানো হয়।’

দলের গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দোষারোপ করে বলেন, ‘তারা কোনো কিছুর বিনিময়ে একেকদিন একেকজনকে মনোনয়নের আশ্বাস দেন। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিতে গ্রুপিং দেখা দিয়েছে। এ বিভাজনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারাই দায়ী।’ মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমিই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাব।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, ‘জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও বৃহত্তর যুব সমাজ আমার সঙ্গে রয়েছে। দল নিরপেক্ষভাবে মনোনয়ন দিলে আমিই মনোনয়ন পাব।’ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান। তিনি আশা করেন দল তাকে মনোনয়ন দেবে। বিএনপির নেতা না হয়েও চুয়াডাঙ্গায় প্রচারে শীর্ষে রয়েছেন ড. এমএ সবুর। তিনি ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিবের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরদিন থেকেই বিএনপির সাধারণ সদস্য পদ গ্রহণ করেন এবং সেই থেকেই তিনি বিএনপির সঙ্গে বলে জানান।

ড. সবুর বলেন, ‘বিএনপির জন্য কাজ করছি। আমি দলের একজন নিবেদিত প্রাণ। মাঠ জরিপ করে দল মনোনয়ন দিলে আমিই মনোনয়ন পাব বলে বিশ্বাস করি।’ এছাড়া আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মীর মহিউদ্দিন ও বিএনপি নেতা শহিদুল কাউনাইন টিলু নির্বাচনে প্রার্থী হতে লবিং করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেনও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচনী মাঠে তিনি সক্রিয়। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী বলে জানান। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমান্ডার শহিদুর রহমান (পিএসসি নেভী) নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমিন যুগান্তরকে জানান, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আমাদের প্রার্থী থাকবে। তবে দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এখনই নাম-পরিচয় বলতে পারছি না।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. জিনারুল ইসলাম জানান, ‘এ আসনে আসমানখালী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জহুরুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ