• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
১৯ বার নিশ্চিত মৃত্যুকে জয় করে এখন বিশ্ব রাষ্ট্রনায়ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র হামাস প্রধানকে হত্যা করে গাজা যুদ্ধ শেষ করতে চায় ! ইসরাইল গাজা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে : সাবেক মোসাদ উপ-প্রধান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি সবজি বহনকারী ট্রাক-লরি থেকে চাঁদাবাজি করছে নগর কর্তৃপক্ষ : সাঈদ খোকন পিটিয়ে ২ তরুণীকে আহত করার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হিউস্টনের ঝড়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে শঙ্কা! র‍্যাবের হাতে হত্যা মামলার আটক আসামি মৃত অবস্থায় হাসপাতালে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, ওবায়দুল কাদেরের অস্ত্র বোঝাই ইসরাইলি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে দেইনি স্পেন বন্দরে

বিপন্নের তালিকায় প্রকৃতির প্রাণ

আপডেটঃ : রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল।

কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল॥…’

শহরের চার দেয়ালের মাঝে পাখির ডাকে ঘুম না ভাঙলেও গ্রামের এমন কোনো মানুষ নেই যাদের পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে না। দৃষ্টিনন্দন রং আর সুমধুর কূজনে চারদিক মুখরিত করে পাখি এ গাছে ও গাছে নেচে বেড়ায়। কোনোটা কালো, কোনোটা সবুজ, কোনোটা ধূসর রঙের আবার কোনোটা কালচে খয়েরি। কোনো পাখি ডাকে কুহু… কুহু…, কোনো পাখি ডাকে চিঁ… চিঁ…, আবার কোনো পাখি ডাকে কা… কা…। কোনো পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। আবার কোনো পাখি থাকতে ভালোবাসে জঙ্গলে, নির্জনে, নিভৃতে। কোনো পাখি গাছের মগডালে বাসা বাঁধে। আবার কোনো পাখি মানুষের থাকার ঘরে বাসা বাঁধে। কোনো পাখি মাছ খেতে ভালোবাসে, আবার কোনো পাখি ধান, ভাত, ছোট ছোট কীটপতঙ্গ খেতে পছন্দ করে। এক এক পাখির এক এক রকমের বৈশিষ্ট্য। দেশে অসংখ্য প্রজাতি পাখি থাকলেও বৈরী জলবায়ুর ও মানবসৃষ্ট কারণে আজ অনেক প্রজাতি বিপন্নের তালিকায়। একসময় বন-বাদাড়ে, নদীর ধারে, গাছের ডালে অহরহ পাখির দেখা মিললেও আজ এদের সংখ্যা কমে এসেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়েই পাখি আজ বিপন্ন। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিশ্বে ১ হাজার ২২৭ প্রজাতির পাখি বিপন্ন অবস্থায় আছে যা পৃথিবীর মোট পাখি প্রজাতির ১২ ভাগ।

বাংলাদেশসহ বিশ্বে মহাবিপন্ন পাখির তালিকায় রয়েছে শকুন। ১৯৮৫ সালেও বাংলা শকুনকে পৃথিবীর অন্যতম বেশি বিচরণকারী পাখি বলা হতো। কিন্তু নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে এদের সংখ্যা এত দ্রুত কমে যায় যে বর্তমানে ৯৯ ভাগ সদস্যই হারিয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জে মরা প্রাণী খাওয়ার জন্য শকুনের ঝাঁকের আনাগোনা এখন অতীত স্মৃতি। হাতেগোনা কিছু শকুন বেঁচে আছে। বসবাসের উপযোগী গাছপালা, খাদ্যের অভাব ও গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক নামক এক ধরনের ওষুধ এদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে।

শিকারি পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন হল পালাসি কুরাঈগল। এরা বড় আকৃতির গাঢ় বাদামি রঙের পাখি। সাধারণত এরা হাওর, বিল বা উন্মুক্ত জলাভূমিতে বিচরণ করে। দক্ষ মাছ শিকারি কুরাঈগল প্রজনন মৌসুম অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অল্প কয়েক মাস এদেশে কাটায়। এই সময় পানির ধারে বড় বড় গাছের মাথায় ছোট ডাল, খড়কুটো এবং পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে। হাওরের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কুরাঈগল বর্তমানে সারা বিশ্বেই বিপন্ন।

বিশ্বব্যাপী মহাবিপন্ন পাখি চামচঠুঁটো বাটান। আশির দশকের শেষভাগে শুধু বাংলাদেশেই ২৫০টি পাখির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ২০০টির মতো পাখি বেঁচে আছে। এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপে এখনও খুব অল্প সংখ্যক পাখি দেখা যায়।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে দেশি গাংচষা। অভিনব একটি পাখি। বিশ্বজুড়েই এরা বিপন্ন। কমলা-হলুদ ঠোঁটের অনিন্দ্য সুন্দর এই পাখি বড় নদী ও মোহনায় বিচরণ করে। সবচেয়ে বড় দল দেখা যায় দেশের দক্ষিণের নিঝুম দ্বীপে। পৃথিবীতে দেশি গাংচষার মাত্র আটহাজার সদস্য টিকে আছে।

প্যারাপাখি বাংলাদেশের আরেক বিপন্ন জলচর পাখি। বিশ্বজুড়েই এরা সংকটাপন্ন। অনেকের কাছে এরা গয়লা হাঁস নামেও পরিচিত। গাঢ় হলুদ ঠোঁটের লাজুক এই পাখি প্যারাবনের কাদায় হেঁটে বা জলে সাঁতার কেটে বেড়ায়। পানির ওপর ঝুলন্ত গাছে বিশ্রাম নেয়। মাটি বা পানি থেকে সামান্য উঁচু গাছে ঘন পাতার আড়ালে ডালপালা দিয়ে বাসা বানায়। বিশ্বে এই পাখি পরিবারের মাত্র ৩টি প্রজাতি টিকে আছে। বাংলাদেশে শুধু সুন্দরবনেই বিপন্ন এই প্রজাতির দেখা মেলে।

মদনটাক আরেক বিপন্ন পাখি। বর্তমানে সুন্দরবনেই বেশি দেখা যায়। উজ্জ্বল কালো রঙের বড় আকারের এই পাখি লম্বায় এক মিটারের বেশি। এরা পানির ধারে, ঘাসযুক্ত এলাকা অথবা নরম কাদায় খাবার খুঁজে খায়। কখনও একাকী, কখনও জোড়ায় জোড়ায় আবার কখনও দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। এরা মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ ও কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী খায়।

মদনটাকের আরেক জাতভাইয়ের নাম হাড়গিলা। এরা বড় মদনটাক নামে পরিচিত। মহাবিপন্ন পাখি হাড়গিলা এদেশের প্রকৃতিতে এখন আর দেখা যায় না। চিড়িয়াখানার বন্দিদশাই হয়তো ন্যাড়ামাথার এই পাখিটির শেষ ঠিকানা।

আকারে বড়, মোটা লম্বা ঠোঁট ও লেজের ধনেশ পাখি গভীর বনে বিচরণ করে। কোনো বনভূমিতে ধনেশের উপস্থিতি বনের ভালো দিক নির্দেশ করে। লাজুক স্বভাবের এই পাখি বিশ্বব্যাপী বিপদমুক্ত হলেও এদেশে এরা বিপন্ন।

বড় মেটেকুড়ালি কাঠঠোকরার বিপন্ন একটি প্রজাতি। এদের শুধু গভীর বনেই দেখা যায়। এরা বেশ বড় আকারের পাখি। বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার সঙ্গে এই পাখির সুন্দর অভিযোজন ঘটেছে। চিরসবুজ বনের এই দুর্লভ পাখি সারাবিশ্বেই সংকটাপন্ন।

আশপাশেই ময়না বা শালিকের বিভিন্ন প্রজাতির দেখা গেলেও শুধু পাহাড়ঘেরা বনে দেখা যায় পাহাড়ি ময়না। মাঝারি আকৃতির কালো রঙের এই পাখির মাথার দু’পাশ ও ঠোঁটের হলুদ রং এদের করে তুলেছে আকর্ষণীয়। বিপন্ন পাহাড়ি ময়না চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের চিরসবুজ বন এবং আর্দ্র পত্রঝরা বনে পাওয়া যায়। বনের ময়না ছাড়াও বনের বাসিন্দা টিয়া, পেঁচা ও মাছরাঙার কিছু প্রজাতি এদেশে আজ বিপন্নের তালিকায়।

বাংলাদেশের বন-বাদাড়ে অনেক পাখিই বর্তমানে বিপন্নের তালিকায়। এদের মধ্যে অন্যতম হল- মেটে কাঠময়ূর, মথুরা, তিতির, বড় মেটেকুড়ালী, পাহাড়ি নীলকান্ত ইত্যাদি। প্রকৃতি থেকে পাখিগুলো বিপন্ন হওয়ার মূল কারণ উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাব। আজ বন-জঙ্গল ও জলাভূমি বৈরী জলবায়ু ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যেই গোলাপিমাথা হাঁস ও ময়ূর বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। নব্বই দশকের শুরুতে এদেশের হাওরাঞ্চলে প্রতিবছর সহস্রাধিক বেয়ারের ভূতিহাঁস দেখা যেত। গত ৫ বছরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছরে গড়ে মাত্র ১০টি করে বেয়ারের ভূতিহাঁস দেখা গেছে। প্রকৃতির প্রাণ পাখিগুলো বিপন্ন হওয়া মানে মানব সমাজের জন্য অশনি সংকেত। তাই মানব জাতির স্বার্থেই পাখিগুলোকে আবার প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ