সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি॥
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মাস ব্যাপী গ্রামীণ পল্লী মেলার নামে শুরু হয়েছে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার মহোৎসব। র্যাফেল ড্র’র নামে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার বাণিজ্য হচ্ছে। ফলে ধংশ হচ্ছে যুব ও ছাত্র সমাজ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ মেলা শুরু হলেও অদৃশ্য কারণে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে।
জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মাসব্যাপী গ্রামীণ পল্লী মেলা পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম খান সহ রাজনৈাতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির নেতারা উদ্বোধন করেন। পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী গণময়দান মাঠে স্পোটর্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় প্রতিদিনই চলছে র্যাফেল ড্রর নামে জমজমাট জুয়ার মহোৎসব যা প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সবুজ বাংলা সার্কাস নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য। ভুতের বাড়ী নামে দেখানো হচ্ছে অসামাজিক ছবি। সারাদিন প্রায় ১শত অটোবাইক উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে বিক্রি করছে লটারির টিকেট। আবার বিকাল ৪টা থেকেই মাঠে মাইকের শব্দে আশেপাশে বাসা বাড়ীতে ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রস্ততি নিতে পারছে না।
কিন্তু ওই মাঠে বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২শ ৪৪ জন কমলমতি শির্ক্ষ্থাীরা লেখাপড়া করে। মেলার কারণে ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে কমল মতি শিক্ষার্থীরা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়াশুনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়াও পল্লী মেলার জন্য জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার একাধিক ছোট বড় ব্যবসায়ীরা জানান মেলার লটারির কারনে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা পুশিয়ে নেয়ার জন্য অনেক সময় লাগবে।
একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে সন্ধ্যার পর মেলায় বেড়াতে যায়। আর সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো লটারির ড্র এর ফলাফল বিভিন্ন স্থানীয় চ্যানেলে লাইফ দিয়ে দেখানো হয় যার ফলে বাচ্চারা মেলায় না গেলেও রাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে টিভির সামনে বসে পড়ে লটারির ফলাফল দেখার জন্য।
তারা আরও জানান, বর্তমানে জেএসসি পরিক্ষা চলমান, আর এ মাসের ১৮ নভেম্বর থেকে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা ও পহেলা জানুয়ারি থেকে এস. এস.সি পরীক্ষা রয়েছে। সারা দিন মাইকের শব্দে আশেপাশের বাসাবাড়ীতে পরীক্ষার্থীরা ভালভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। আর এসব কথা জেনেও কেন জানি না আমাদের সরিষাবাড়ীর স্থানীয় প্রশাসন না জানার ভান করে চুপচাপ বসে আছে। ফলে আমরা আশংকা করছি এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বাচ্চারা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারবে না। এরজন্য দায়ি কে থাকবে?
এ ব্যাপারে উক্ত মাঠে অবস্থিত বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছালেহা বেগম জানান, গ্রামীণ পল্লী মেলার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মন না দিয়ে মেলার মাঠে চলে যায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শ্রেণীকক্ষে আটকে রাখতে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শ্রী মন্টুলাল তেওয়ারী জানান, গ্রামীণ পল্লী মেলার কারণে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা ও লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী স্পোটর্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় কাউন্সিলর শ্রী কালাঁ চান পালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি পড়ে ফোন দেন বলে লাইন কেটে দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী জানান, আসলে সরিষাবাড়ীতে অনেক দিন ধরেই কোন বিনোদন মুলক কিছু নেই। তাই এই গ্রামীন পল্লী মেলার আয়োজন করেছে সরিষাবাড়ী স্পোটর্স এসোসিয়েশন। মেলার কারনে পরিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সমস্যা হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেলা কতৃপক্ষ উপর থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে ।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার জন্য ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আহাম্মেদ কবির জানান, আমি উক্ত মেলার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি এবং উক্ত অভিযোগ গুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বলেছি।