মিথ্যা কেউই পছন্দ করেন না। কিন্তু প্রায় সবাই কমবেশি মিথ্যা বলে থাকেন। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, সত্যের মধ্য দিয়েও মিথ্যা বলা যায়। এটা সত্য মিথ্যার মাঝামাঝি অবস্থান। এতে মিথ্যা বলা হয় সত্যের সাহায্য নিয়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ছোট বেলায় আপনার মা যখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করতেন -‘আজকের হোমওয়ার্ক শেষ করেছ?’ তখন হয়তো আপনি আসলেই হোমওয়ার্ক শেষ করেননি। কিন্তু মাকে বললেন, ‘এই তো রচনাটা লেখা শেষ করলাম’। হয়তো আপনার কথাটা সত্যি ছিল। কিন্তু মায়ের প্রশ্ন ওই রচনা লেখা নিয়ে ছিল না। তারপরেও তিনি বিভ্রান্ত হলেন। ধরে নিলেন যে সন্তান হোমওয়ার্ক শেষ করেছে। সম্প্রতি একদল গবেষক মানুষ কিভাবে সত্যের সাহায্য নিয়ে মিথ্যা বলে সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করেছেন। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘প্যাল্টারিং’।
তারা লিখেছেন, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা বলার বেশি অভিযোগ। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাচ্ছে প্যাল্টারিং তত বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডাহা মিথ্যা বলা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ খুব সহজে মানুষ হাতের কাছে তথ্য খুঁজে পায়। তাই কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা বলছে তা সহজে বের করা যায়। তাই ‘মিথ্যাবাদী’ বদনাম এড়াতে মানুষ এখন বেশি করে প্যাল্টারিং শুরু করেছেন যাতে তিনি মিথ্যা বলতে চাইলেও কৌশল ব্যবহার করছেন যাতে তার মধ্যে আংশিক সত্যি লুকিয়ে থাকে। ফলে মিথ্যাবাদী সাজতে না হয়।
১৯৯৬ সালে বেলা ডি পাওলো নামের একজন গবেষক এ ব্যাপারে একটি জরিপ শুরু করেন। তিনি তার রিপোর্টে লেখেন আমাদের প্রত্যেকেই দিনে কমপক্ষে গড়ে ১ থেকে ২টি মিথ্যা বলি। তিনি টানা দুই সপ্তাহ ধরে কিছু মানুষের উপর জরিপ চালান। জরিপে অংশ নেয়া ১৪৭ জনের মধ্যে কেবল ৭ জন বলেন, এই সময়ের মধ্যে তারা একবারের জন্যও মিথ্যা বলেননি। অন্যরা স্বীকার করেন তারা মিথ্যা বলেছেন।
গবেষকরা বলছেন, সামাজিক পরিবেশের কারণেও মানুষের মধ্যে প্যাল্টারিং বাড়ছে। কেউ হয়তো খুব সাজগোজ করেছেন। কিন্তু তাকে সুন্দর দেখানোর পরিবর্তে হাস্যকর দেখাচ্ছে। কিন্তু তাকে খুশি করার জন্য আপনি এভাবে প্যাল্টারিং করলেন- ‘আপনাকে যা লাগছে না’! এই বাক্যের মাধ্যমে আপনি ভাল কিংবা খারাপ উভয়টি বুঝিয়ে দিলেন। প্রেম কিংবা দাম্পত্য জীবনেও পরস্পরকে খুশি করার জন্য প্যাল্টারিং হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রতিপক্ষ কিংবা সহযোগীদের কাছে এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করেন। গবেষক টেড রজার বলেন, অনেক ছোট শিশুরাও মায়ের শাস্তি এড়াতে নিজেদের অজ্ঞাতে অনেক সময় প্যাল্টারিং করে থাকে। অর্থাৎ এটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। খবর-বিবিসি।