সাতক্ষীরা প্রতিনিধি॥
“মানুষ মনুষের জন্য, একটু সহানোভূতি কি পেতে পারে না” দিন আনতে পানতা ফুরায় শ্যামনগর বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের শাহিনুর আলমের। স্ত্রী জোৎস্না আক্তারকে নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার হয়ে যাচ্ছে তার। সাড়ে তিন বছর আগে তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় আছিয়া খাতুন। অভাবের ঘরে সন্তান এলেও খুশির কমতি ছিল না বাবা-মায়ের। কিন্তু যখন বুঝতে পারল তাদের সন্তান অজ্ঞাতরোগে আক্রান্ত। আছিয়ার ডান পা’টি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেছে। বাম পা ও দুই হাতের আঙ্গুলগুলো অসম্পূর্ণ ও দিন দিন জোড়া লেগে যাচ্ছে। এসব দেখে ক্ষণিকের আনন্দ তাদের কষ্টে পরিণত হলো। সুন্দরবন ঘেষা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আইলা বিধ্বস্ত এলাকা বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি গ্রামে বসবাস এই পরিবারটির। দিনদিন বড় হতে থাকে আছিয়া। বড় হতে থাকে তার রোগও। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা হয় না তার। আছিয়ার বাবা দিনমজুর শাহিনুর আলম প্রতিবেদককে জানান, জন্মের পরই আছিয়ার হাতে ও পায়ের সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আছিয়ার বয়স যখন ৭ মাস তখন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তাররা দেখেন ও প্রাথমিক পর্যায়ে একটি অপারেশন করেন। সেখানে অনেকদিন থাকতে হয়েছিলো। এদিকে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ৭০ হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়। পরে তিন মাস পরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে আর নিয়ে যাওয়া বা চিকিৎসা করানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম, একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু দেয়নি। তাছাড়া পরিষদ থেকে চিকিৎসার জন্য কোনো সহায়তাও করেনি। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আছিয়ার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন আমার স্বামী দিন মজুরী করে যে টাকা আয় করেন তাতে আমাদের তিনবেলা খাওয়াই ঠিকভাবে হয়না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি ও তাসনিয়া জেবার মত শিশুদের নিজের বুকে স্থান দিয়ে মায়ের মমতা দিয়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসার মাধ্যমে মুখে হাসি ফুটাচ্ছে, তেমনি যদি আমার মেয়েটার ও চিকিৎসা করার দ্বায়িত্ব নিত তাহলে আমার মেয়ের মুখের হাসিটা অম্লান হত না। এদিকে, ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমার সেভাবে জানা নেই। তাছাড়া কত মানুষ আসে মনে রাখাও কঠিন। যারা আসে তাদের ৫শ টাকা করে সহায়তা করে থাকি। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিষদের পক্ষ থেকে সেভাবে কোনো বরাদ্দও থাকে না। তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। স্থানীয় ইউপি সদস্য জিএম আব্দুর রউফ জানান, পরিবারটি খুব অসহায়। ভ্যান চালিয়ে ও দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্ম করে কোনো রকমে সংসার চলে তাদের। টাকার অভাবে অসুস্থ মেয়ে আছিয়ার চিকিৎসা করাতে পারলো না তার পরিবার। আছিয়ার ছবি দেখানো হলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. জিএম আব্দুস সালাম জানান, বাচ্চাটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব। বাচ্চাটি ধৎঃবৎরড়াবহড়ঁং সধষভড়ৎসধঃরড়হ রোগে আক্রান্ত। ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতালে নিলে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। হয়ত বা কিছু রক্তনালী বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া বাচ্চাটির আরও সমস্যা থাকতে পারে যেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। চিকিৎসা ব্যয় কত হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন তবে চিকিৎসা ব্যয় আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। আছিয়ার বিষয়ে জানতে ও সহযোগিতা করতে কথা বলতে পারেন ০১৯১১-০১২৮১৬ এই নম্বরে।