• শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৩ অপরাহ্ন

সরিষাবাড়ীতে পাঠদান না করিয়েই দেড় বছর ধরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন এক মাদ্রাসা শিক্ষিকা

আপডেটঃ : বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি॥
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বিলবালিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ‘সমাজ বিজ্ঞান’ পদের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পাঠদান না করিয়েই প্রায় দেড় বছর ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার সুপার মাওঃ কাজী আব্দুছ ছবুর খাঁনের যোগসাজশে শিক্ষিকা মোছাঃ রূপা খাতুন নিয়োগের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠাণে অনুপস্থিত থাকলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এ ব্যাপারে বিলবালিয়া গ্রামের শাহান শাহ্ সরকারের ছেলে মেহেদী হাসান সজীব বাদি হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বিলবালিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ কাজী আব্দুছ ছবুর খাঁন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। গত বছরের আগস্ট মাসে তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের শ্যালিকা রূপা খাতুনকে বিধি বহির্ভূতভাবে ‘সমাজ বিজ্ঞান’ শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দেন। নাম সর্বস্ব পত্রিকায় ‘ব্যাক ডেটে’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ভূয়া নিয়োগ বোর্ড গঠণ ও সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে গোপনে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২৩/০৮/২০১৬ইং তারিখে তাঁর যোগদান দেখানো হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকার এমপিভূক্তি হয়। এদিকে যোগদানের শুরু থেকেই শিক্ষিকা রূপা খাতুন মাদ্রাসায় টানা অনুপস্থিত থাকলেও সুপারের যোগসাজশে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ জানলেও রহস্যজনক কারণে কিছুই হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার মাওঃ আব্দুছ ছবুর বলেন, ‘নিয়োগে অনিয়ম হয়েই থাকে, তাতে কিছুই হয় না। আমি নিজেও দুর্নীতির দায়ে তিন বছর বরখাস্ত ছিলাম, তখন বিভিন্ন দপ্তরে অনেক লিখিত দিয়েছি কিছুই হয়নি, এ নিয়োগ নিয়েও কিছুই হবে না।’
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী, এলাকাবাসী ও কোন শিক্ষার্থীই শিক্ষিকা রূপা খাতুনকে চেনে না, ওই শিক্ষিকাও কোন শিক্ষার্থীকে চেনেন না। তিনি টানা অনুপস্থিত থাকলেও ০২/০৪/২০১৭ইং তারিখে মাদ্রাসায় গিয়ে হাজিরা খাতায় যোগদানের শুরু থেকে সবগুলো স্বাক্ষর একসাথে দিয়ে যান।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা গেছে, শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত কোন শ্রেণির রুটিনেই ওই শিক্ষিকার নাম নেই। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের কোন পরীক্ষাতেই কক্ষ পরিদর্শকের তালিকাতে তাঁর নাম নেই। বেতনের একাংশ সুপারকে উৎকোচ দেওয়ার শর্তে তিনি জেলা শহরের বাসায় অবস্থান করে থাকেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার সুপার জানান, ‘ওই শিক্ষিকা দূরে থাকেন, তাই শিক্ষকদের পরামর্শে ক্লাশ রুটিনে তাঁর নাম রাখা হয়নি। আর পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া না দেওয়া আমার ইচ্ছা।’
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষিকা রূপা খাতুনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভগ্নিপতি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগকালীন (সাবেক) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, ‘নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম হয়নি, অসুস্থ্যতার জন্য অনুপস্থিত থাকতেই পারেন। ক্লাশ রুটিনে নাম না থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠাণ প্রধান বলতে পারবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপার ও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার মাদ্রাসায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ওই শিক্ষিকাকে অনুপস্থিত দেখতে পাই। তখন সুপার আমাকে ‘ওই শিক্ষিকা ছুটিতে আছে’- বলে জানায়। তবে টানা অনুপস্থিতির বিষয়টি জানা ছিল না। এ ব্যাপারে আজ (গতকাল বুধবার) একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ