• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

পোশাক শিল্পে দূর্বৃত্তদের দিয়ে চক্রান্তকারীরা অস্তিরতা সৃষ্টি করছে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নানা ধরনের উদ্যোগ, আয়োজন সভা সমাবেশ মিটিং করার পরও পোশাকশিল্পের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের পোশাকখাত। শ্রমিকদের পক্ষে করা দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক? নাকি শ্রমিকদের আড়ালে কোনো চক্র অস্থিতিশীল করে তুলতে চায় পোশাকখাতকে, বিব্রত করতে চায় অন্তর্বতী সরকারকে? যার পেছনে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা জড়িত বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই চক্রান্তকারীরাই শ্রমিক নামধারী দূবৃত্তদের দিয়ে পোশাক শিল্পে অস্তিরতা সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবারও শ্রমিক অসন্তোষ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৮৬টি কারখানা অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষসা করেছে। আর সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে আরও ১৩৩টি কারখানায়।

সচেতনমহল মনে করেন, সম্প্রতি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবী তুলে আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। কারখানা, পরিবহণ ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কতিপয় শ্রমিক নামধারী উচ্ছৃঙ্খল দূর্বৃত্তদের মারমুখী আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে মাস শেষে বেতন, ওভারটাইম মজুরি, উৎসব ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে নিজ পরিবারকে আর্থিক জোগান দেওয়ার বিষয়টি।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান, পোশাক শিল্পে অসন্তোষের পিছনে এই শিল্পের ভিতরের কেউ খেলছে, তাদের চিহিৃত করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের কোন ইন্দন থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ধ্বংশের পিছনে ভারতের ইন্ধনের আভাষ দিয়ে বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এনিয়ে কাজ করছে।

এসপি সারোয়ার আলম বলেন, আজও (বৃহস্পতিবার) ১৩৩টি কারখানায় সাধারন ছুটি ঘোষনা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক আরও ৮৬টি কারখানা অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি যৌথবাহিনী কাজ করছে।

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, গামের্ন্টস শিল্পে অস্তিরতার পিছনে বহিরাগতদেরও হাত রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক সেজে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এছাড়াও ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়েও আন্দোলনরত শ্রমিকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আছে।
শ্রমিক নেতারা মনেকরেন, আন্দোলনকারী শ্রমিকরা যেসকল দাবীদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করছে তার কোন যুক্তি খুজে পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিকদের উস্কে দেয়ার পিছনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুসারীদের হাত রয়েছে ধারনা তাদের।

পোশাক শ্রমিক মোরশেদা বেগম বলেন, বহুছর ধরে আশুলিয়া থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করি। কে শ্রমিক আর কে বহিরাগত তা চিনতে অসুবিধা হয় না। অল্প বয়সের ছেলেরা শ্রমিক সেজে কারখানায় হামলা ও সাধারন শ্রমিকদের উস্কে দিয়েছে। ওই শ্রমিক নামধারী দূবৃত্তদের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের পথসভায় দেখেছিলেন তিনি।
তবে বিভিন্ন কারখানার সাধারণ শ্রমিকদের কথা হলো, যারা মাঝেমধ্যেই গার্মেন্টস সেক্টরে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির কাজে লিপ্ত হয়, তাদের অনেকেই নাকি গার্মেন্টস শ্রমিক নয়। এরা বেশিরভাগই বহিরাগত। শ্রমিক নামধারী দূর্বৃত্ত।

স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেছেন, হঠাৎ করে রাজনীতির পালাবদল, ঝুট ব্যবসা দখল, শ্রমিক অসন্তোষের কারন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর আওয়ামীলীগ নেতাদের ঝুট ব্যবসা বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। তখন স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনুসারীরা ঝুট ব্যবসা না পেয়ে এক শ্রেনির অভাবী শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা করছে বলে তার ধারনা।

শিল্প মালিকরা মনে করেন, পোশাক কারখানায় স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি না হলে দেশের এই খাতে কমবে বিদেশি বিনিয়োগ, সংকটের সুযোগ নিবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। তাই দ্রুত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় করার দাবি করেন তারা।
বুধবার আশুলিয়ার নরসিংহপুরে চলমান নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচাতে শ্রমিক জনতার সমাবেশে যোগ দিয়ে বিজিএমইএ এর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কিছু উস্কানীদাতা লোকজন শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা গুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে, এতে মালিকদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। গামের্ন্টস শিল্পে যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর উস্কানি দিচ্ছে তাদের খুজে বেরকরার অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনকে।

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়ার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে নানাবিধ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গার্মেন্টস খাতকে ধ্বংসের এক অপচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন স্থানে পলাতক থেকে একটি চক্র এই শিল্পটিকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। আমরা শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করছি যাতে কোন চক্রের উস্কানিতে না পরে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে শ্রমিক নামধারী কিছু দূবৃত্তরা কাজ করছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মুরাদ জং এর অনুসারীদের হাত থাকতে পারে বলে ধারনা এই শ্রমিক নেতার।
প্রসঙ্গত, ৪ সেপ্টেম্বর চাকরি প্রত্যাশী ও পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিন বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে শ্রমিক অসন্তোষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ