• শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

বাবার কাঁদে ভর করে পরীক্ষা কেন্দ্রে

আপডেটঃ : শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি॥
কোন বাধাই বাধসাদতে পারেনি কারখানা শ্রমিক আমিনুর রহমানের  মেয়ে অদম্য আন্নিকার কাছে। একটি ভয়ানক সড়ক দুর্ঘটনায় গত দুই মাস পুর্বে তাঁর পা দুটো ভেঙ্গে গেছে। বিকল পায়ের ব্যথা যেন এখন হাতে এসে বাসা বেঁধেছে। পায়ের মত বা হাতে খুব একটা শক্তি করতে পারে না। কেবল ডান হাতের আঙুলে যে শক্তি আছে আর মনোবল দিয়ে নিজ হাতে লিখে এবার প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা দিচ্ছেন। হাটতে না পারায় প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয় বাবার কাদে ভর করে,ভ্যানে চড়ে।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী এলাকার। উপজেলার হবিরবাড়ী কৃষি খামার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার আন্নিকা (১০) পিইসি (প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা) দিচ্ছে। দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ও শারীরিক এমন প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে নিজের স্বপ্ন পুরন করতে মরিয়া খুদে এই শিক্ষার্থীর।
গতকাল ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষার দিন সকালে বাবার কাদে ভর করে আব্দুল গনী মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসতে দেখা যায় আন্নিকাকে। এ সময় তাঁর সাথে প্রতিদিনের মত বাবাই ছিল,কারন তার মা নাজমা বেগম একজন কারখানা শ্রমিক হিসেবে ডিউটিতে ছিলেন। আন্নিকা তাঁর ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দি তার বাড়ি। অভাবের তাড়নায় তাঁর বাবা মা গত নয় বছর যাবৎ বাড়ি ছেড়ে কাজের খোঁজে আসেন ভালুকায়। উপজেলার আমতলি এলাকায় হবিরবাড়ী কৃষি খামার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (বুলবুল মাস্টারের) বাড়ীতে বাড়া থেকে, অনেক চেষ্টা করে স্থানীয় এসএমসি কারখানায় বাবা ও মা সামান্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ভিটেমাটিসহ মোটামুটি সম্পত্তি আছে গ্রামের বাড়িতে। একটু সচ্ছলতার আশায় ভালুকায় তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। খুদে এই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পড়াশোনা করে ডাক্তার হবে । আর এই স্বপ্ন পুরন করতে শত বাধা পেরিয়ে হলেও সে পড়া লেখা করবে বলে তাঁর প্রত্যয়ে। গতকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়,নিচ তলার একটি কক্ষে বন্ধু আর সহপাঠিদের ছেড়ে একা একটি কক্ষে। বিছানা পেতে একাকী পরীক্ষা দিচ্ছে আন্নিকা। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেও শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে,উত্তর দেয় না।
বাবা কারখানা শ্রমিক মো.আমিনুর রহমান বলেন, ২ মাস পূর্বে গ্রামের বাড়ী যাওয়ার পথে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিজেরা অক্ষত থাকলেও মেয়ের দুটো পা’ই ভেঙ্গে যায়। মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম,কিন্তু মেয়ের ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকায় সে নিয়মিতই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে। আমি আশাবাদী সে ভালো রেজাল্ট করবে।
কেন্দ্র সচিব মো.জসীম উদ্দিন বলেন-এ বছর এই কেন্দ্রে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়,২৮ কিন্ডার গার্টেন ও ২টি মাদরাসা মিলিয়ে ৮ শতাধিক পিএসসি পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করছে। যাদের মধ্যে একমাত্র আন্নিকা‘ই একলা একটি কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে। তারপরও সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে আনন্দিত। অসুস্থ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণে যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে তার পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান জানান, পরীক্ষা দেখে মনে হচ্ছে, আন্নিকার লেখাপড়ার প্রতি প্রচ- ঝোঁক রয়েছে। শারীরিক সমস্যা থাকায় নির্ধারিত সময় তিন ঘণ্টার মধ্যেই তাকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, কারন সে প্রতিবন্ধি নয়। তবে অন্যদের সঙ্গে একই সময়ে  লেখা শেষ করে সে খাতা জমা দিয়ে হল ত্যাগ করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ