আট বছর আগে ২০০৯ সালে তত্কালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন শিকার হয়েছিলেন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের। বিডিআর জওয়ানদের হাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিলো। নিহতদের স্বজনরা রয়েছেন সেই হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় ধাপের বিচারের অপেক্ষায়। আগামীকাল রবিবার ওই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন।
রায়ে জানা যাবে আসামিদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া দণ্ড কতটা বহাল রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। এই মামলায় ঘাতকদের চরম দণ্ড দেওয়া না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে না। তিনি বলেন, পিতার সঙ্গে সন্তানের যে সম্পর্ক, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের সৈনিকদের সে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিডিআর জওয়ানরা তাদের সে সম্পর্ক পদদলিত করেছে। মৃত্যুর আগে যেভাবে কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের অসম্মান করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলায় আমরা যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি তার আলোকে রায় হবে এবং ওই রায়ে আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তত্কালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে মামলা দুটি স্থানান্তর হয় নিউমার্কেট থানায়। হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিলো ৮৫০ জন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিডিআরের উপ-সহকারি পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৭ জন। এরপর মৃত্যুদণ্ডের এই রায় নিশ্চিতকরনে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এছাড়া খালাস পাওয়া ৬৯ জওয়ানের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটি নিষ্পত্তির ২০১৫ সালে প্রস্তুত করা হয় ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক। এরপরই হাইকোর্টের তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠন করা হয় বৃহত্তর বেঞ্চ। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি পেপারবুক পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি। ৩৭০ কার্যদিবসব্যাপী এই শুনানি চলে। এর মধ্যে ১২৪ কার্যদিবস পাঠ করা হয়েছে পেপারবুক। বাকি ২৪৬ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেন।
ওই সময় বিডিআর বিদ্রোহের ভিডিওচিত্র হাইকোর্টে প্রদর্শন করা হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এসব ফুটেজ প্রচারিত হয়েছিলো। ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো তখন আমরা সেই ঘটনার নৃশংসতা ও নির্মমতা দেখেছি। এ রকম নৃশংসতা দেখলাম পিলখানার ঘটনায়। যেভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়। প্রায় আট মাস পর নভেম্বর মাসে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রবিবারের কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রয়েছে।