• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না গাজায় গণকবর থেকে প্রায় ৪০০ মরদেহ উদ্ধার দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করে না, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষো হংকং, সিঙ্গাপুরের পর ইইউতে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে মিলেছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক থাইল্যান্ডকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে প্রস্তাব, হতে পারে বাণিজ্য চুক্তি: প্রধানমন্ত্রী বন্যা-ভূমিধস তানজানিয়ায় নিহত অন্তত ১৫৫, আহত দুই শতাধিক ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র

রংপুরে হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু জনজীবন

আপডেটঃ : সোমবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৮

রংপুর প্রতিনিধি॥
শৈত্য প্রবাহ আর কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো রংপুর অঞ্চল। পৌষের শেষে রংপুর অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে।  গত ৭ দিন থেকে এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৯ থেকে ২১ ডিগ্রী সেলসিয়ারের মধ্যে উঠানামা করছে। ফলে সূর্য্যরে দেখা একটু পেলেও তেমন টা তাপমাত্রা  পাচ্ছেন না এই অঞ্চলের মানুষ। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে মানুষজনের পাশাপাশি গৃহপালিত জীবজন্তু। নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এই রোগির সংখ্যা। এদিকে,পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র জুটছে না শীতার্তদের। গরম কাপড়ের জন্য চলছে ছুটাছুটি। দিশেহারা ছিন্নমুল মানুষ কাজকর্ম না থাকায় ভোগান্তিতে দিন পার করছে। রংপুর আবহওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান,  ১ জানুয়ারী থেকে ৭ ই জানুয়ারী পর্যন্ত এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা সর্বনিম্ন ৭৮ এবং সর্বোচ্চ ১০০ ভাগ এর মধ্যে উঠানামা করেছে। এরমধ্যে গত ১ জানুয়ারী  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৯%। ২ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ছিলো ৯৯%। ৩ জানুয়ারী  সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২  ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯৭%।  ৪ জানুয়ারী  সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯৯%।  ৫ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৭ ডিগ্রী, সর্বনিম্ন ১০ ডিগগ্র সেলসিয়াস, আদ্রতা ১০০%; ৬ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৪,  সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৭৮%। একই সময়ে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং বাতাদের আদ্রতা ছিল সর্বনিম্ন ৭৫ এবং সর্বোচ্চ ৯৯ ভাগ। রংপুর আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী তাপমাত্রা ছিল  সর্বোচ্চ ২৬ ও সর্বানিম্ম ১৪ দশমিক ৬ ডিগগ্র সেলসিয়িাস, বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯১%;  ২ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রী  ও র্সর্বানিম্ম ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আদ্রতা ৯১%। ৩ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আদ্রতা ৭৫%;  ৪ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস,আর্দ্রতা ৯৯%।  ৫ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৭  ও সর্বনিম্ন ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯৯% এবং ৬ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫ ও সর্বোনিম্ন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা  ৯৯% ভাগ। ৭ জানুয়ারী সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৪ ও সর্বোনিম্ন ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর্দ্রতা  ৯৯% ভাগ। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী আরো জানান, বাতাসের আর্দ্রতা কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় সূর্য্যের  দেখা মিলছে না। তাই ঝড়ছে শীত। এই অবস্থা আরও চার-পাঁচ দিন থাকার কথা জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ। চলতি মৌসুমে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত তেমন শীত অনুভূত হয় নি এই অঞ্চলে। মানুষজন ভেবেছিল এবার শীত হবে না তেমন। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে এই অঞ্চলে শীত জেঁঁকে বসে। কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে কাহিল মানুষজন, জীব-জন্তু। গত ছয় দিন ধরে এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ এতটাই বেশী যে, হাত পা শীতল হয়ে যাচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবুও পেটের দায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে  ক্ষেতে খামারে কাজ করছে সাধারণ মানুষ। গরু-ছাগলসহ গবাদিপশুর অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবিরতা । তীব্র শীতে এই অঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতদিন অসংখ্য রোগি এই অঞ্চলের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিষ্টার ডা. কামরুজ্জামান জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, বাতজ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন শীত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুরুতর আক্রান্তদের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের পরিচালক ডা. মওদুদ আহমেদ জানান, শীতজনিত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশী। তিনি এই শীতের তীব্রতায় সবাইকে সাবধানে চলাফেরা করার কথা জানিয়েছেন। রংপুর জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক জানান, আমরা ১ লাখ পিচ বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিলাম। এর মধ্যে প্রথম দফায়  ৫৪ হাজার ৭শ’ পিচ কম্বল পেয়েছি। তা ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বরাদ্দ আসবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। রংপুরের জেলা প্রশাসক  মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সরকারী ভাবে আমরা আরও বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছি। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি ব্যাংক বীমা, এনজিও ও সমাজের বিত্তবান মানুষদের  এগিয়ে আসার আহবান জানান। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ জানান, হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছেন। আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারী সহযোগিতার পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ