• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

আবারও দখল নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত

আপডেটঃ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রংপুর অফিস॥
কয়েকদফা অভিযানের পরও নগরীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত হচ্ছে না। নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত এখন হকার ও ছোট-বড় বিভিন্ন দোকানদারদের দখলে। কোথাও কোথাও ফুটপাত পেরিয়ে রাস্তায় বসেছে ফলমূল ও পানের দোকান। এর কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যস্ততম নগরীর পথচারীদের।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মিত অধিকাংশ ফুটপাত ছোট-বড় কাপড়ের দোকান, পানের দোকান, ফলমূল ও চায়ের দোকানদারদের দখলে। রংপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, জাহাজ কোম্পানী, পায়রা চত্বর, সুপার মার্কেটসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের ফুটপাতগুলো ও রাস্তার কিছু অংশও দখল করেছে হকাররা । এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গত বছরে কয়েক দফা ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান চালালেও কোন কার্যকর ফলাফল দৃশ্যমান হয়নি। রংপুর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত বছরে সাবেক মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর উদ্যোগে নগরীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত হলেও পরবর্তীতে তদারকির অভাবে ফুটপাতগুলো পুরোপুরি দখলমুক্ত করা যায়নি। বরং পরবর্তীতে আবার নতুনভাবে ফুটপাতগুলো দখল হয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলকারী ২০ টি দোকানকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়ায় পরবর্তীতে পুনরায় ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট অভিযান চালানো হয়। এসময় ৫০ টি অবৈধ দোকানদারকে জরিমানা করা হয়। এরপরও পুরোপুরি দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি নগরীর ফুটপাতগুলো। এরপর শেষ ২০১৭ সালে সাবেক মেয়রের উদ্যোগে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও সে পদক্ষেপও দেখেনি আলোর মুখ। এদিকে ফুটপাত দখল হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ব্যস্ততম নগরীর পথচারীরা।
একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাওন আহমেদ বলেন, কলেজ থেকে বাড়ির দুরত্ব কাছে হওয়ায় বাড়ি থেকে আমি হেটে কলেজে যাই। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন সর্বোচ্চ দশ মিনিটে স্কুলে পৌঁছে যেতাম। কিন্তু এখন ঐ একই দুরত্ব আমার হেটে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। ফুটপাতগুলো দিয়ে হাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে খুব ভীড়ের মাঝে পড়তে হয়। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাব তারও উপায় নেই। রাস্তাতেও দোকান বসছে। আবার রাস্তায় যানবাহন তো আছেই। পথচারী সাগর হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, পথচারীর চলাচলের জন্য ফুটপাত তৈরী করা হয়েছে। এখানে দোকান বসবে কেন?  আরেক পথচারী রেজিনা পারভীন বলেন, চার-পাঁচ বছর আগেও নগরীর ফুটপাতে চলাচলে কোন ভোগান্তি পোহাতে হত না। কিন্তু বর্তমানে নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত দখল করে নিয়েছে দখলদাররা। পথচারীরা হাটবে এমন যায়গাও নেই। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যেতে হয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমান মেয়রের কাছে আমরা নগরবাসী আশাবাদি। আমরা মনে করি এমন জনদুর্ভোগের একটি সঠিক সমাধান তিনি বের করবেন। জানতে চাইলে নগরীর সিটি বাজারের সামনে ফুটপাতে বসা কাপড়ের দোকানদার বাদল হোসেন বলেন, পেটের দায়ে আমাদেরকে দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান করার জন্য যথেস্ট পুঁজি আমাদের নেই। সুপার মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে বসা ঘড়ি মেকানিক মামুন বলেন, আমরা জানি ফুটপাতে বসা ঠিক নয়, এতে পথচারীদের সমস্যা হয়। কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ অভিযান হয়, তখন কিছুদিন আর দোকান নিয়ে বসি না। পরে অভাবের তাড়নায় বসতেই হয়। পায়রা চত্বরে ফুটপাত পেরিয়ে রাস্তার পাশে কাপড়ের দোকানদার আকবর আলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালায়। কিন্তু আমাদের কথা বিবেচনা করে না। আমাদেরকে অন্য কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। তাহলে আমাদেরও ভালো হয়, সিটিবাসীরও ভালো হয়।
জানতে চাইলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা যে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করবো। ফুটপাতও দখলমুক্ত করা হবে। এ জন্য প্রথমে আমি ব্যবসায়ী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বসে এ বিষয়ে একটি কার্যকরী উদ্যোগ নে। যাতে হকার্স, দোকান মালিক কিংবা জনগণ সকলের ভালো হয়, কারো কোন ক্ষতি না হয়। এরপরও কাজ না হলে জনগণের ভালোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ হাসানুজ্জামান সরকার বলেন, শুধু অভিযান চালিয়ে বা উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি হকার্সদের বা ফুটপাতে বসা দোকানদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আবার প্রতি মাসে তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী তদারকি টিমও থাকতে হবে। যারা কার্যকর ফলাফলে কাজ করে যাবে। তবেই ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ