• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই করুণ দশা কেন?

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদনেই দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বেহালদশার কথা বলা হইয়াছে। প্রায় ৩৭ শতাংশের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রহিয়াছে নাজুক অবস্থায়। এই বিদ্যালয়গুলি ব্যবহারের অনুপযুক্ত। ২০১৬ সালের তথ্য লইয়া প্রাথমিক শিক্ষার ‘বার্ষিক সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৭’-এ তুলিয়া ধরা তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক স্কুল রহিয়াছে ৬৪ হাজার ১১২টি। তন্মধ্যে ৬ হাজার ৫৪৬টি বিদ্যালয় চলিতেছে মাত্র একটি কক্ষ নিয়া। ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হইতেছে একজন মাত্র শিক্ষক দ্বারা। দেশের ৬৫ শতাংশের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট রহিয়াছে। অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের আয়তনও আদর্শ মানের নহে।
সরকারি প্রতিবেদনে সরকারি বিদ্যালয়ের বেহাল চিত্রই ফুটিয়া উঠিয়াছে। অনুমান করিতে কষ্ট হয় না, নির্মাণকালীন ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিদ্যালয়গুলির এই করুণ দশা হইয়াছে। বৈদেশিক অর্থসাহায্যে নির্মিত এই বিদ্যালয়গুলির নকশা আকর্ষণীয়, দেখিতেও সুন্দর। কিন্তু কয়েক বত্সরের মধ্যেই বিদ্যালয় ভবনগুলি বিবর্ণ ও জরাজীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। ইহার কারণ যদি হয় নির্মাণকালীন দুর্বলতা, তবে তাহাতে দুর্নীতির ভাগ রহিয়াছে। আবার আমাদের দেশে ভবন নির্মিত হয় ঠিকই, তাহার রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয় না। বা থাকিলেও তাহাতে রহিয়া যায় দুর্নীতি ও ফাঁকি।
প্রাথমিক শিক্ষা সকল পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই পর্যায়েই শিক্ষার প্রাথমিক বুনিয়াদ গড়িয়া ওঠে। অভিভাবকরা তাই তাহাদের শিশুদের উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পাঠাইতে চাহেন। এই জায়গায় সরকারি বিদ্যালয়গুলি পিছাইয়া পড়িয়াছে। পৃথিবীর নানান দেশে সরকারি বিদ্যালয়গুলিই মর্যাদা ও ঐতিহ্যের প্রতীক, পাশাপাশি শিক্ষার খরচও কম, ফলে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে চিত্র উল্টা। সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি বিদ্যালয় সমৃদ্ধ হইয়া ওঠে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পরিত্যাগ করিবার কারণে এক অসম শিক্ষাব্যবস্থা গড়িয়া উঠিয়াছে। যাহাদের অর্থ নাই তাহারা পড়িবে সরকারি বিদ্যালয়ে আর যাহাদের অর্থ রহিয়াছে তাহারা পড়িবে ‘উন্নত’ ও ‘যুগোপযোগী’ বেসরকারি বিদ্যালয়ে। তাই প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ভাবিতে হইবে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে অভিভাবকদের নিকট আকর্ষণীয় করা যায়। ইহার অংশ হিসাবে যেমন শিক্ষার মান রক্ষা করিতে হইবে, তেমনি সুদৃশ্য ভৌত অবকাঠামো গড়িয়া তোলার দিকেও মনোযোগী হইতে হইবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির নিজস্ব মাঠ থাকে, এই জায়গায় বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি হইতে এইগুলি আগাইয়া রহিয়াছে। এখন বিদ্যালয় ভবনগুলিকে আধুনিক করিতে হইবে এবং যেইগুলি ইতোমধ্যে স্থাপিত হইয়াছে তাহার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে। নূতন বরাদ্দের অপেক্ষা না করিয়া উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি বরাদ্দ হইতে কিছু অংশ বিদ্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করা যাইতে পারে। একটি বিদ্যালয় ভবন স্থাপনের বরাদ্দে দেখা যাইবে উপর হইতে নিচ পর্যন্ত অনেকেই ভাগ বসাইয়াছে। আর ঠিকাদারদের অসততা তো রহিয়াছেই। একটি দুর্বল ভবনের পিছনে লোভী মানুষগুলির দুর্নীতিই মূলত দায়ী। ইহার প্রভাব পড়িতেছে সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায়। এই দুষ্টচক্র হইতে আমাদের মুক্ত হইতে হইবে। ইহার জন্য নীতিনির্ধারক হইতে শুরু করিয়া সাধারণ অভিভাবক, সকলকেই একযোগে কাজ করিয়া যাইতে হইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ