• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

হুমকি পাল্টা-হুমকির খেলা

আপডেটঃ : রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

কিছুদিন পূর্বে উত্তর কোরিয়া চমকাইয়া দিয়াছিল পুরো বিশ্বকে—আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষার কথা জানাইয়া। ওই মিসাইল কিনা সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইয়া স্পর্শ করিতে সক্ষম উত্তর আমেরিকা মহাদেশকে! উত্তর কোরিয়ার মিত্র-পরাশক্তি রাশিয়া এইবার জানাইল এমন একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কথা—যাহা কিনা সকলের চোখ ফাঁকি দিয়া আঘাত হানিতে পারিবে বিশ্বের যেকোনো স্থানে! আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পার্লামেন্টের এক যৌথ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতার সময় ভিডিওর মাধ্যমে ওই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটিসহ আরো কয়েকটি নূতন যুদ্ধাস্ত্র উপস্থাপন করেন। ইহার মধ্যে রহিয়াছে একটি মনুষ্যবিহীন ডুবোজাহাজ এবং পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম একটি দূরপাল্লার মিসাইল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সমপ্রতি তাহার দেশের নূতন পরমাণু কৌশল প্রকাশ করিয়াছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারকে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী করা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ওয়াশিংটনের নূতন পরমাণু কৌশল প্রকাশের প্রেক্ষিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তাহার দেশের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বশেষ কর্মসূচি লইয়া এই সকল তথ্য প্রকাশ করিয়াছেন বলিয়া মনে করিতেছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। অনেকে মনে করেন— যুদ্ধ নহে, ইহা শক্তির ভারসাম্যের প্রদর্শন, যাহা অনেকটা কাঁটা দিয়া কাঁটার আঘাত আটকাইবার মতো। কেবল একটি কাঁটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ওই কাঁটা প্রতিনিয়ত অন্যের অস্তিত্বের উপর খোঁচাখুঁচি করিতে দ্বিধা করে না। কিন্তু দুইটি কাঁটা থাকিলে অনেকটাই ভারসাম্য হয়। আমরা দেখিয়াছি, বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া নূতন করিয়া গাঢ় হইতেছে। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলি ভাঙিয়া পড়িতেছে, সেইখানে আরব বসন্তের নামে যে ধরনের গণতন্ত্র রপ্তানির উদ্যোগ দেখা গিয়াছে, তাহা বুমেরাং হইয়া সমগ্র অঞ্চলকে নরক বানাইয়া ফেলিয়াছে। গণতন্ত্র রপ্তানির পূর্বে আমরা দেখিয়াছি সমাজতন্ত্র রপ্তানির কুরুক্ষেত্র। বিংশ শতকে যেই সকল সংকট দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইউরোপ অথবা দক্ষিণ আমেরিকাতে সমাচ্ছন্ন ছিল, তাহার বিবর্তিত ও বিবর্ধিত রূপ আমরা দেখিতে পাইতেছি একবিংশ শতাব্দীতে আসিয়া। এই সংকট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয়। এই সংকটের হাত ধরিয়া আরো বিচিত্র সংকট ছড়াইয়া পড়িতেছে বিশ্বময়। কথিত সন্ত্রাসনির্মূলে বিশ্বব্যাপী যে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধ চলিতেছে, তাহা নাইন-ইলেভেনের পর গত দেড় যুগে নূতন নূতন ক্ষেত্রে, নূতন নূতন অজুহাতে যুদ্ধ, মৃত্যু আর আগ্রাসন বিস্তৃত করিয়াছে। দেখা দিয়াছে শীতল আতঙ্ক, আধিপত্য, অস্ত্র প্রতিযোগিতা আর সীমাহীন মৃত্যুগন্ধময় স্নায়ুযুদ্ধের সমারোহ। যুদ্ধের বিস্তৃতি যত বাড়িয়াছে, সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়াছে ততটাই। অন্যদিকে ছড়াইয়া পড়া সন্ত্রাসের সহিত বিশ্বে নিভৃতে ছড়াইয়া পড়িতেছে এক হিমশীতল ‘ভয়ের সংস্কৃতি’। সেই ভয়ের সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে গ্রাস করিতেছে সমগ্র বিশ্ব।
হুমকির প্রেক্ষিতে পাল্টা-হুমকি কিংবা অস্তিত্ব রক্ষার প্রেক্ষিতে পাল্টা-মাস্তানির গর্জন না থামিলে বিশ্বের অশান্তি কী করিয়া প্রশমিত হইবে? কাঁটা-প্রতিকাঁটার কাটাকাটিতে অকালে ঝরিয়া যাইতেছে নিরীহ মানুষের প্রাণ। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’—এই কথাটিকে মিথ্যা প্রমাণেরই যত আয়োজন দেখা যাইতেছে বিশ্বজুড়িয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ