• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

বিদ্যালয়ের ভবন তিস্তায় খোলা পাঠদান মাঠে

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

রংপুর অফিস॥
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে ভেঙে যাচ্ছে একটি আনন্দলোক বিদ্যালয়। তিস্তার ভাঙনে বিদ্যালয়ের ল্যাট্রিণ ও শ্রেণী কক্ষের ভিতরের মেঝে তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বিল্ডিংটি এখন পানিতে দাড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকগণ পাঠ দিচ্ছেন খোলা মাঠে। ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিল্ডিংটি রক্ষার জন্য ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন এর বাস্তবায়নে ২০১৩ সালে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে শিক্ষার মান উন্নয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা কামাল আনন্দলোক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকে চরাঞ্চলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান গ্রহণ করছে। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সাফল্যের সাথে উর্তীণ হচ্ছে। বিদ্যালয়টি স্থাপন হওয়ায় চরের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার মানবৃদ্ধির এ বিদ্যালয়টির অবস্থা এখন করুন। এবারে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রেডবিম দিয়ে ৪ রুম বিশিষ্ট নির্মানাধীণ এ বিদ্যালয়টির ল্যাট্রিণ ও রুমের ভিতরের পাকা মেঝে তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। শুধু বিমের ওপর বিল্ডিংটি পানির মাঝে দাড়িয়ে আছে। দুর থেকে দেখলে মনে হয় এটি পানির মধ্যে ভাসমান একটি বিল্ডিং। বিদ্যালয় ভাঙনের পাশাপাশি ভেঙে গেছে প্রায় ৫০ জনের বাড়িঘর জমি, গাছ, বাঁশ ও পাওয়ার প্লানের ঘর। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান ব্যাক্তিগতভাবে অর্থ, বালুর বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করে ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয়ের বিল্ডিংটি রক্ষার চেষ্ঠা করছেন। এছাড়া এলাকাবাসী, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর দিন-রাত আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সরজমিন গেলে বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুলতানা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলে, তোমরা দেখবের আসছেন, আগত হামার স্কুলটাক বাাঁচান। স্কুলটাত হামরা মেলা ছওয়া পড়াপড়ি। স্কুলের মাঝিয়া, পায়খানা ভাংগি গেইছে। খালি বিল্ডিংটা পানিত খাড়া আছে। স্যারেরা গাছের ছায়াত মাটিত বসে পড়ায় ছোল। ওটাও ভাংগি গেলে হামরা কোনটে পরমো। ৪র্থ শ্রেণীর রায়হান, মেহেদী, মাসুদা আতিকা, সোহেল, ৫ম শ্রেণী শিক্ষার্থী ফাতেমা, শারমিন, ওয়ালিদ তাদের স্কুল রক্ষার দাবি জানান শিক্ষক মশিয়ার রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে ২০৪ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় রক্ষা করা না গেলে তাদের লেখাপড়া ভবিষ্যৎ কি হবে বলা মুশকিল। অতিকষ্টে খোলা মাঠে পাঠদান করা হচ্ছে। অভিভাবক আসাদ, মাহাম্মদ, এলাকাবাসী মনতাজ, আইয়ুব বলেন চরে বিদ্যালয়টি হওয়ার পর থেকে শিক্ষার মানবৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি ঝড়ে পড়া আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কিন্তু এ বিদ্যালয়টি তিস্তায় বিলীন হচ্ছে, ভাঙন রোধে এলকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ইউপি চেয়ারম্যান সহযোগিতা করে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে ঠেকানো চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেই। বিদ্যালয়ের জমিদাতা কাজী আবু তালেব জানান, চরে শিশুদের সংখ্যায় বিদ্যালয় নাই। জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত বিদ্যালয়টি হওয়ায় শিক্ষার মান-উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বেড়েছে শিক্ষার হার কমেছে ঝড়ে পড়া। সরকার শিক্ষার মান-উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এনজিও কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ৫০টি বাড়ি বিলীন হলেও সরকারি কর্তৃপক্ষের সাড়া নেই। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে শুধু বিদ্যালয় নয় বিনবিনা চর বিলীন হয়ে যাবে। মানুষজন পথে বসবে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন। হাসান বলেন, জনগণের কাছের জনপ্রতিনিধি বা বন্ধু হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের চরে শিক্ষার মান ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। জাগরণীর পিও শওকত আলী স্বপন বলেন, তিস্তার কয়েক দফার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয় রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু, বলেন বিদ্যালয়টি ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে বালুর বস্তা ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছি। বিদ্যালয়ের সাথে চরবাসীকে ভাঙনের কবল থেকে বাাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ