• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বন্যা-ভূমিধস তানজানিয়ায় নিহত অন্তত ১৫৫, আহত দুই শতাধিক ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩ দায়িত্ব পালন কালে হিটস্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী-এমপিদের সজনদের কাছে জিম্মি স্থানীয় জনগণ : রিজভী ৪ মে থেকে খুলতে পারে স্কুল-কলেজে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে পড়েছিল রিকশাচালকের লাশ স্ত্রীর বেগোনার দুর্নীতির কারণে দায়িত্বপালন স্থগিতের ঘোষণা স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা

বনবিভাগের জমিতে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চান্দরা পল্লী বিদ্যুৎ জোড়াপাম্প এলাকায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদিন ব্যাপী বনবিভাগের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন।দ্বিতীয় দিনে উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। গাজীপুর পুলিশের নতুন এসপি হিসেবে শামছুন্নাহার যোগদানের পরই পরিবর্তন হয়ে যায় দৃশ্যপট। অভিযানে বাদ যায়নি বনের জমিতে গডে উঠা বনখেকো মুচি জসিমের অবৈধ চারতলা বিলাশ বহুল বাড়িটিও। অভিযানে বনের জবর দখল হওয়া প্রায় ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মৃল্য একশত কোটি টাকা হবে বলে বনবিভাগ দাবী করেছে।
মঙ্গলবার স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিযানে প্রায় পাচশত ঘর বাড়ী ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ওই সব ঘর বাড়ী গুলোতে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। বনের জমিতে গড়ে উঠা এ সব অবৈধ বাড়ীতে পৌরসভা থেকে হুল্ডিং নাম্বার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। অভিযানের সময় বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। পরে রয়েছে বিদ্যুৎ এর তার। গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার প্লেট সব খুলে নেওয়া হয়েছে। কবর গুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের ফলক ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে। ওই খানে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। বন বিভাগের ভিতর ভয়ে আর কেউ যেতে চায়না। কিন্তু দেখতে আসা হাজার হাজার উৎসুক জনতার রয়েছে প্রচুর ভীর। এ এলাকা এখন পরিনত হয়েছে টিকিটবিহীন যাদুঘরে। যে যার মত ওই স্থান ভেঙ্গে পরা ঘরের টিন কাঠ ফার্নিচার ও মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। কেউ মাথায় করে, কেউ ভ্যান, আবার কেউ ট্রাকে যে যেভাবে পারছে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। মালামাল সরানোর পরই ওই জমিতে কাটা তারের বেড়া দেওয়া হবে। পরে ওই স্থানে বনবিভাগ থেকে গাছ লাগানো হবে। প্রায় এক মাইলের মধ্যে কোন গাছ ঘর বাড়ী কিছুই নেই। পাশে রেকর্ডীয় জমিতে কিছু বাড়ী রয়েছে। সেই বাড়ীগুলো সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে বনের ভিতর পরলে তাও ভেঙ্গে দেওয়া হবে বলে কতৃপক্ষ জানিয়েছেন। সন্ত্রাসী জসিমের প্রতি মানুষের প্রচন্ড ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। প্রায় তিনশত বিঘা জমি জবর দখল করে ঘর বাড়ী দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান করে জসিম ও অবৈধভাবে ওইসব ব্যক্তিদের নিকট থেকে ২-৩ লাখ টাকার বিনিময়ে শাল গজারী গাছ কেটে বনের জমি দখল করে দেয়। জবরদখল করে ‘নতুনপাড়া’ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলা হয়। অথচ বছর তিন-চার আগেও ওই এলাকা শাল-গজারির গভীর অরণ্যে ঘেরা ছিল। রাতারাতি পুরো বনাঞ্চল বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। বনবিভাগ বার বার চেষ্টা করেও ওই জমি জবর দখলমুক্ত ও জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়। দূর্দন্ড প্রতাপের অধিকারী মুচি জসিমের ভয়ে ওই এলাকায় কোন বন রক্ষী ও গনমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় অনেকেই হয়েছেন লাঞ্ছিত। তার অপকর্মের কারণে তার নামে ২টি মামলায় সাজাসহ ১৮টি বন মামলা থাকা স্বত্তেও দিব্যি ঘুরে বেরিয়েছেন। বনের মাঝ খানে ছিল তার খোলা ডাকবাংলো। যাকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো।সেখানে মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা আদায় করা হতো বলে একাধীক লোক দাবী করেছেন।এলাকাবাসী জানায়, জসিমের শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনীর প্রধান এবি সিদ্দিক বাবুসহ সকলেই গা ডাকা দিয়েছে।আবার অনেকেই তার সহযোগী হিসাবে কোটি টাকা,বাড়ী,গাড়ীর মালিক হলেও তারা এখন কৌশল অবলম্বন করে জসিমের বিরুদ্ধে তার অপকর্মের কথা বলছে। বড় স্ত্রী ও ছোট স্ত্রীর জন্য যে প্রাসাদ গড়ে তোলা হয়েছে তা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেছে। এলাকায় ফিরে এসেছে স্বস্তি। ভয়ে আতংক মানুষগুলো জীবনের নিরাপওা খুজে পেয়েছে। জসিম চিরতরে চলে যাবার কারনে মানুষ আনন্দ মিছিল মিষ্টি বিতরন করেছে। জসিমের লাশ ওই এলাকার মানুষ কবর দিতে দেয়নি।পরে পুলিশের সহয়তায় দেশের বাড়ী তার লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার মার কবরটিও গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ জসিমের বিচারের দাবীতে সোচ্চার। এ দিকে তার মৃত্যুর পর সফিপুর এলাকায় তার রেশমা সুজ নামক দোকানে তালা মেরে দিয়েছে এলাকাবাসী। উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই এলাকায় এখন চায়ের দোকানসহ সর্বত্র জসিমকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।
চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ জানান, গত কয়েক বছরে বনদস্যু জসিম ও তার সহযোগীরা ওই এলাকার প্রায় ১০ একর মূল্যবান জমি জবরদখল করে নেয়। দুই দিনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় বনের জমি উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নিজে উপস্থিত হয়ে হয়ে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। বনের সকল বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বনের চারিদিকে কাটা তারের বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ