• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা : দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষক

আপডেটঃ : সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি॥
চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বাংলাদেশে শীতের আবহাওয়া বিরাজ করছে। হালকা শীত আর কুয়াশা মাখা ভোর নিয়ে হাজির হয়েছে অগ্রহায়ণ। সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। শুধু আমন ধান নয় কাটা শুরু হয়েছে বরো, হাইব্রিড-২৮, হাইব্রিড-৩৮সহ অন্যান্য জাতের পাকা ধান। বর্তমানে মাঠে কৃষক ধান কাটতে ব্যস্ত। কৃষকের ঘরে উঠছে রাশি রাশি সোনার ধান। নতুন ফসলে ভরা কৃষকের ঘরে তৈরি হচ্ছে নানান ধরণের পিঠা। উৎসবের আমেজে কৃষাণ কৃষাণী ব্যস্ত সময় পার করছে ফসল প্রক্রিয়াজাতের জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মঞ্জুরুল হুদা এ প্রতিবেদককে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৫৩ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। বর্তমানে মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ছয় শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে মাঠের সব ধান কাটা হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ও কৃষকেরা ধানের সঠিক পরিচর্যা করায় এ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করবে এবারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষিবীদ মঞ্জুরুল হুদা আরো জানান, যে সব এলাকায় ধান ক্ষেতে পানি সেচের ব্যবস্থা নেই সে সব জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যে সব ক্ষেতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ হয়েছে সে সব ক্ষেতে ধানের ফলন ভালই হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তুু তারপরও হাসি নেই কৃষাণ কৃষাণীর মুখে। কারণ ধানের পর্যাপ্ত দাম পাওয়ায় সম্ভাবনা নেই।
রবিবার ও সোমবার সরেজমিনে গিয়ে ধানক্ষেতে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর, চামা টোলা, বড় টাপ্পু, কাসসাট। অন্যদিকে সদরের আতাহির, জামতলা, নিমগাছি, উপরাজারামপুর, পলসা, গোবরাতলাসহ আরো কিছু এলাকায় কৃষকেদের ধান কাটতে দেখা গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক ফজলু, আইনাল, বজলু, হারুনুর রশিদ, জিয়াউল হক, কাজেম আলীর সাথে কথা বললে তারা জানান, খুব ভাল ফলন হলে এক বিঘা জমিতে ধান হয় ৯ থেকে ১০ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু এ ধান রোপণ করা থেকে শুরু করে মাড়াই করা পর্যন্ত কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিনোদপুর চামাটোলার কৃষক ডলার, শামিম, কামাল, নয়ন, সুমন, করিম জানান, ধানের ফলন ভালো হলেও ধানের দাম আমরা পাবনা। কারণ ধানের দাম অনেক কম। আমরা যে খরচ করেছি সেটাই উঠবে কিনা সন্দেহ আছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবী কৃষকের একমাত্র অবলম্বন ধানের দাম যেন বৃদ্ধি করা হয়।
অপরদিকে কৃষক কাউসার, সোহেল রানা, নাজির, আকবরসহ অনেকে জানান, ধান রোপণ, কাটা, মাড়াই কড়া থেকে ঘওে তুলা পর্যন্ত যে খরচ হবে দানের যে দাম তাতে আমরা সে খরচ তুলতে পারব না। কৃষি কাজ করে অভ্যস্ত তাই এ কাজ আমরা ছাড়তেও পারি না।
কৃষকরা আরো জানান, ধান বিক্রি করেই সংসার চালানো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ, পোষাক কেনাসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় আমাদের করতে হয়। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় এবারে কিভাবে চলব সেই চিন্তা সারক্ষণ ভর করছে মনের মধ্যে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। মাছে ভাতে বাঙালীর দেশে বড় একটা অংশ বিস্তার করে আছে দেশের কৃষক। ধান ছাড়াও তারা নানা রকম শাকসবজিও রোপণ করছে ক্ষেতে। ধান কাটা শেষ হলেই তারা জমিতে গম লাগাবেন বলেও জানান। সকলের তাই এখন একটাই প্রত্যাশা ধানের দাম যেন বৃদ্ধি করা হয়। তাহলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে, স্বার্থক হবে তাদের দিনরাত মাঠের নিরলস খাটনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ