কুমিল্লার মানুষের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন বিপন্ন। ৩২ বত্সর পূর্বে স্থাপিত এই চিড়িয়াখানায় দেখিবার মতো তেমন কোনো চিড়িয়াই নাই! দীর্ঘ দিন ধরিয়া নামসর্বস্ব এই চিড়িয়াখানাটি মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়া আছে। পশু-পাখির খাঁচাগুলির প্রায় সকলই খালি। এই বিনোদন কেন্দ্রের ভিতরের চিত্রও একেবারে নাজুক। সীমানা প্রাচীর ভাঙা, অবকাঠামোর অবস্থা বেহাল এবং অভ্যন্তরীণ জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়া হাঁটাচলাও দুরূহ। এক সময় যে স্থানগুলিতে দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল সেই সকল স্থান অযত্ন-অবহেলায় এখন কচুরিপানা, ঝোপ-জঙ্গল আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হইয়াছে। তবে জানা গিয়াছে, চিড়িয়াখানাটির আধুনিকায়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হইয়াছে।
১৯৮৬ সালে কুমিল্লা শহরের কালিয়াজুড়ি মৌজায় ১০ একর জায়গা নিয়া কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় এক একর জায়গা নিয়ে চিড়িয়াখানা করা হয়। শুরুতে এটি সিংহ, বাঘ, চিতা বাঘ, মেছো বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ভাল্লুক, বিড়াল, গাঙচিল, মিসরের মুরগি, অজগর, খরগোশ, হনুমান, খেকশিয়াল, চিত্রা হরিণ ইত্যাদি অসংখ্য বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন চিড়িয়াখানাটি প্রাণীশূন্য বিরাণভূমিতে পরিণত হইয়াছে। কিছুদিন আগে মারা গিয়াছে এই চিড়িয়াখানার একমাত্র আকর্ষণীয় প্রাণী সিংহটি। ইতিপূর্বে অজগরটি মারা গিয়াছে। ১৪ বছর আগে মারা গিয়াছে একমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং সঙ্গীবিহীন ময়ূরটি। কিন্তু নূতন কোনো পশুপাখি আর আনা হয় নাই। বর্তমানে সর্বসাকুল্যে মাত্র ৫টি প্রজাতির ১৬টি পশুপাখি আছে। তন্মধ্যে আছে ১০টি বানর, ২টি অজগর, ১টি হরিণ, ১টি টার্কি মোরগ আর ২টি ঘোড়া। ইহাকে কি চিড়িয়াখানা বলা চলে! অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহও ইহার তুলনায় অনেক বেশি হয়। সব মিলাইয়া চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থা এখন একেবারেই বেহাল। পরিণত হইয়াছে লুটপাটের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে। ফলে বিশেষ দিনগুলিতেও বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা তেমন দেখা যায় না।
আর কয়েক মাস বাদেই ৩৫ বত্সরে পা রাখিবে ঢাকা চিড়িয়াখানা। এই দীর্ঘ সময়েও ইহা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিড়িয়াখানায় রূপ পায় নাই। বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া সীমাহীন অনিয়ম, চরম অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির বৃত্তে আটকাইয়া আছে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি। চলিতেছেও খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া। দুর্নীতির কারণে কিছুদিন আগে চাকুরিচ্যুত হন চিড়িয়াখানার কিউরেটর। তবুও থামে নাই অনিয়ম-দুর্নীতি। কুমিল্লা এবং বিভাগীয় অন্যান্য শহরের চিড়িয়াখানার বেহাল দশার জন্যও অনুরূপ কারণগুলিকেই শনাক্ত করা যাইবে। আধুনিক চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনার নামগন্ধ এইগুলিতে দেখা যাইবে না। চিড়িয়াখানা ও উদ্যান ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী যখন সৃজনশীল ধারণা লইয়া উত্তরোত্তর আগাইয়া যাইতেছে তখন আমাদের এই দৈন্যদশা দেখিলে করুণা হয়। এমতাবস্থায়, কুমিল্লা চিড়িয়াখানার উন্নয়নে যে প্রকল্প প্রস্তাব করা হইয়াছে তাহাও কতোটা যথার্থই পশুকল্যাণে ও পরিবেশ উন্নয়নে ব্যবহূত হইবে সেই শঙ্কা থাকিয়াই যায়।